রংপুরে নিজ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে সাড়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার মেসার্স মালেকা ব্যাটারী হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী সাজেদুল ইসলাম সাজু। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর দাবি, ম্যানেজার জুয়েল মিয়া তার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অপকৌশলে কয়েক দফায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে আত্মসাৎ হওয়া টাকা উদ্ধারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ায় জুয়েল ও তার লোকজন বিভিন্নভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুরে নগরীর শাপলা চত্ত্বরে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরে ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম সাজু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে রংপুরে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পাশাপাশি মের্সাস মালেকা ব্যাটারী হাউজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিনি পরিচালনা করে আসছেন। ওই প্রতিষ্ঠানে নতুন ও পুরাতন ব্যাটারি কেনাবেচা হয়। চাকরির কারণে সঠিকভাবে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারতেন না। একারণে ২০১৭ সালের পহেলা এপ্রিল নগরীর পূর্ব দেওডোবা হাজীপাড়া এলাকার মৃত জাহেদুল ইসলামের ছেলে জুয়েল মিয়াকে তার প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়োগপ্রাপ্তির পর থেকে জুয়েল মিয়া এ বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জুয়েল মিয়ার কাছে স্বাক্ষর করা ইসলামি ব্যাংক ধাপ শাখার ব্লাংক চেক বই জমা রেখেছিলেন উল্লেখ করে সাজেদুল ইসলাম সাজু বলেন, আমার এই সরলতার সুযোগ নিয়ে ম্যানেজার জুয়েল প্রিতারণা করেছে। কয়েক দফায় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৪০লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি। ব্যবসার সুবাদে ম্যানেজার জুয়েলকে ব্যাংকের নিকট বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। জুয়েল ওই ব্যাংক থেকে প্রায় কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরলতার সুযোগ নিয়ে জুয়েল মিয়া অপকৌশলে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তোলন করা ২৩ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ছাড়া চলতি বছরের ১৬ মার্চে ৩৬ লাখ টাকা উত্তোলন করে সাড়ে ৯ লাখ, ২০ মার্চে ১৮ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৫ লাখ, ২১ মার্চে ২০ লাখ তেকে ৫ লাখ এবং সর্বশেষ ২২ মার্চ উত্তোলন করা ৩০ লাখ থেকে সাড়ে ১১ লাখ (৫টি চেকে সর্বমোট ৪০ লাখ ৫০ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করেছে। জুয়েলের কাছে ওই টাকার হিসাব চাওয়ায় বিভিন্নভাবে টালবাহানা করে আসছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা ও উপস্থিতিতে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাতদিনের মধ্যে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ স্বাক্ষরিত চেক বইয়ের পাতাসমূহ ফেরত দিবে মর্মে অঙ্গীকার করেন ম্যানেজার জুয়েল মিয়া। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও জুয়েল টাকা ও চেক বইয়ের পাতাসমূহ ফেরত দেয়নি। উল্টো কৌশলে গত ১০ এপ্রিল তার নিকটে থাকা ব্রাক ব্যাংকের ব্ল্যাংক চেকের পাতায় মন মতো ৫৭ লাখ টাকা লিখে ডিসঅনার করে ব্যাংক থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন। অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে আমি নিজে বাদী হয়ে প্রতারণা ও চেক জালিয়াতি মামলা দায়ের করেছি। মামলা দায়েরের পর থেকে জুয়েল ও তার লোকজন বিভিন্নভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসহ তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন বলেও দাবি করেন সাজেদুল ইসলাম সাজু।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জুয়েল মিয়া বলেন, আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। লালবাগে আমার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার দোকানের ম্যানেজার নয়, আমি সাজেদুল ইসলাম সাজুর ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলাম। আমি তার কাছে ৫৭ লাখ টাকা পাই, অথচ আমার নামে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা করে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে।