কারো কাছে তিনি আশা আপু, কারো কাছে আশা দিদিমনি, আবার কারো কাছে শুধুই আশা মনি। তবে যে নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন, তিনি তাতেই সারা দিচ্ছেন। সদা হাস্যোজ্জল সাদামনের এ মানুষটি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সবার পরিচিত একটি মুখ।
জনপ্রতিনিধি হয়ে কিংবা দলীয় পদপদবী না থাকা সত্বেও শুধু নিজের ইচ্ছে শক্তি আর স্বামীর অকুন্ঠ সমর্থনে টানা ১৭ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। প্রতিমাসে একবার নিজ বাড়িতে সভা করে এলাকাবাসীর সমস্যার কথাশুনে তা লিখে রাখেন আশা মনি। পরবর্তী একমাস ওইসব সমস্যা সমাধানে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে এলাকাবাসীর কাছে মুজিব প্রেমিক সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী মৌরিন আক্তার আশা মনি আজ একমাত্র আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের আগরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মিয়াবাড়ির সন্তান মরহুম আনাম মিয়ার একমাত্র মেয়ে আশা মনি। বিগত মহামারী করোনার দুই বছরে ব্যবসায়ী স্বামী কামরুজ্জামান স্বজলের দেয়া অর্থ, নিজের স্বর্ণলংকার বিক্রি এবং সঞ্চায় করা অর্থ দিয়ে ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রায় ২৬ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন।
স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ২০০৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে আশা মনি ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। সেই থেকে অগণিত কর্মী সমর্থক নিয়ে রাজপথের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে দলীয় কর্মসূচীতে রয়েছে তার সক্রিয় অংশগ্রহন। একাধিকবার তাকে মেরে ফেলারও পরিকল্পনা করা হয়।
মাত্র ২১দিন বয়সে বাবাকে ও সাড়ে তিনবছর বয়সে মাকে হারানো আশামনি বড় হয়েছেন তার চাচাদের সংসারে। ২০০৯ সালে একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড রমজানকাঠী গ্রামে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর ব্যবসার সুবাধে শহরের পরিবেশে আয়েশি জীবনযাপন করার সুযোগ হলেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ শুন্য আগরপুরে দলকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবা এবং মরহুমর বাবার স্মৃতি রক্ষায় আশা মনি থেকে যান গ্রামে। এতেই তার জীবনে নেমে আসে লোমহর্ষক ঘটনা।
আশা মনির চাচা ও স্বামীর পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাকে (আশা) আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরে আসার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কারণ তারা সবাই অন্যদলের সমর্থক। কিন্তু আশা মনিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আশা মনি’র চাচাদের ইন্ধনে তার স্বামীর পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য আশা মনিকে হুমকি প্রদান করতে থাকেন। পরবর্তীতে পাশ্ববর্তী ভরসাকাঠী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন আশামনি’র স্বামী। যেখানে বসেই দীর্ঘদিন থেকে স্বামী কামরুজ্জামান স্বজলের অকুন্ঠ সমর্থনে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী মৌরিন আক্তার আশা। এমনকি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে আশা মনিকে তার মরহুম বাবার সকল সহয় সম্পত্তি থেকে না ওয়ারিশ করে বঞ্ছিত করেন তার (আশা মনি) চাচারা।
একজন জনপ্রতিনিধি না হয়েও কিংবা দলের পদণ্ডপদবী বিহীন নিঃস্বার্থ ও পরোপকারী মৌরিন আক্তার আশা দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী স্বামীর অকুন্ঠ সমর্থনে সমাজ সেবায় বিভিন্নক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি মানুষকে সহজেই আপন করে নিতে পারেন। যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে। শিক্ষা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় তিনি একাধিক পদকে ভূষিত হয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে তিনি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের সদস্যদের সরকারি বিভিন্ন ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি অসংখ্য পরিবারকে গভীর নলকূপ পাইয়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেত্রী মৌরিন আক্তার আশা বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হলে কোন পদণ্ডপদবীর দরকার হয়না। শুধু নিজের ইচ্ছে শক্তি আর ভাল একটা মন থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, আমি সর্বদা মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করছি। তার দেখানো পথেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্ঠা করছি। গ্রামের অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারের কেউ যেন বলতে না পারেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে না খেয়ে আছি, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের কল্যাণে কাজ করছি।
বিগত ১৪ বছর ধরে তিনি (আশা মনি) রমজান মাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার শহীদ পরিবারের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার জন্য আশা মনি প্রতিদিন ৫০ জন ব্যক্তির জন্য সেহরি এবং ৫০ জনের ইফতারীর আয়োজন করে সর্বদা প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বর্তমানে তার কর্মী সমর্থকদের দিয়ে অসহায় কৃষকের ক্ষেতের বোরো ধান কাটিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন। নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ নিয়েও তিনি কাজ করছেন। বাল্য-বিয়ের কুফল সম্পর্কে গ্রামের নারীদের তিনি সচেতন করছেন। যেন তাদের মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া না হয়।
বঙ্গবন্ধু প্রেমিক সমাজসেবী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী মৌরিন আক্তার আশা বলেন, আসলে কোনো সম্মাননার জন্য আমি কাজ করিনা। সমাজের অবহেলিত ও দুঃস্থ মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সামান্য কর্মী হিসেবে যখন ওইসব মানুষের হাতে প্রধানমন্ত্রীর নাম বলে তার পক্ষ থেকে কিছু তুলে দিতে পারছি, তখনই নিজের কাছে খুব ভালো লাগে।
দলীয় পদণ্ডপদবী সম্পর্কে মৌরিন আক্তার আশা বলেন, বর্তমানে অনেকেই এই একই প্রশ্ন করছেন। শুনেছি ইতোমধ্যে আমার অজান্তে ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকশ’ সমর্থক একজোট হয়ে আগামী কমিটিতে আমাকে সম্মানজনকস্থানে রাখার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে আবেদন করেছেন।
তবে আমি বলতে চাই, কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় আমি ইতিহাস থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালবেসেছি। তারপর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করে রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছি। দলের নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন, আমি পদ পাওয়ার যোগ্য তাহলে পদ পাবো, নতুবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সামান্য কর্মী হিসেবে সমাজের অবহেলিত ও দুঃস্থদের জন্য কাজ করে যাবো।