এক একর (১০০ শতাংশ) জমিতে বোরো আবাদে নিজের জমিতে কমপক্ষে ৫ হাজার বা তারও বেশি ও বর্গা বা মেদি জমিতে ক্ষেত্র বিশেষ ১৫/২০ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। এতে তারা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা। ধানের উৎপাদন হ্রাস, শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের মজুরি বেশি এবং ধানের দাম কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা হতাশা ও বিপর্যন্ত অবস্থায় পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ চলতি বোরো আবাদে ২২ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭৫১ হেক্টর। আর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। ইতোমধ্যে উপজেলা জুড়ে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর ফলন কম ও শ্রমিকের মজুরি বেশী হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এক একর জমিতে আগে যেখানে ৮০-১২০ মন ধান হতো এবার তা ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মন ধান হচ্ছে। বর্তমানে এক মন ধানের দাম ৬০০-৭৫০ টাকা। সে হিসেবে এক একর জমির ৬০ মন ধান ৭৫০ টাকা বিক্রি করলে ৪৫ হাজার টাকা। খরচের হিসেব করলে দেখা যায়, নিজের জমি হলে এক একর জমি প্রস্তত করতে ৪ হাজার টাকা, বীজ ও বীজতলা ৪ হাজার টাকা, ধানের চারা রোপন ৬ হাজার টাকা, সার ও কীটনাষক ৬ হাজার টাকা, সেচ দেওয়া ৫ হাজার টাকা, জমি নিরানী ২ হাজার টাকা, ধান কাটতে ১২-১৫ হাজার টাকা, মাড়াই করতে ২ হাজার টাকা, এরপর ধান বাজারে বিক্রি ২ হাজার টাকা। এখানে কমপক্ষে কৃষকের ৫/৮ হাজার টাকা লোকসান। আর যদি জমি বর্গা বা মেদি নেওয়া হয় তাহলে আরো ১৫ হাজার টাকা যোগ হয়।
শিমুল তলা গ্রামের মো. জুয়েল মিয়া (৪৮) বলেন, আমি ১৮ (৯০ শতাংশ) কাঠা জমি ১৬ হাজার টাকায় মেদি নিয়ে বোরো আবাদ করে ২০ হাজার টাকা লোকসানে আছি।
চক যোগানিয়া ইউনিয়নের মোঃ আমিরুল ইসলাম (৪৩) বলেন, এবার ধানে শীল পড়া ও ধানে চিটা ধরা, উৎপাদন কম, কামলার দাম বেশি থাকায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সারা বছরের পরিশ্রমের একমাত্র সম্বল এই ধান। ধান আবাদে এখন যে খরচ তাতে কিন্তু ধানের দাম যদি ঠিক না থাকে তাহলে আমরা কীভাবে বাচঁবো। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমরা যেন ধানের ন্যায্য দাম পাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আলমগীর কবীর বলেন, কৃষকরা উচ্চ ফলণশীল ধান আবাদ না করে পুরনো জাতের ধান আবাদ করা পোকার আক্রমনে ফলন কম হয়েছে। যে সমস্ত কৃষক জমি বর্গা বা মেদি নিয়ে আবাদ করেছেন তারা কিছুটা লোকসানের মধ্যে থাকবে।