দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা কৃষিশ্রমিকের তীব্র সঙ্কট পড়েছেন বোরো চাষিরা। বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকাতে পাওয়া যাচ্ছে না কৃষিশ্রমিক।
কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে প্রাকৃতি অনুকূলে থাকাসহ কোন প্রকার দুর্যোগ কিংবা পোকার আক্রমণ কম থাকায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে প্রত্যেকটি ক্ষেতে। তবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে পাকা ধান ঝরে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন সরকার বলেন, এবার সাড়ে ১৫ বিঘা জমিতে বোরোধান চাষ করেছেন। শ্রমিক সঙ্কটে কারণে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। ৮ হাজার টাকা বিঘা চুক্তিতে ধান কাটতে শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। তা না হলে পাকা ধান ক্ষেতেই ঝরে পড়ে যাবে।
উপজেলা চকচকা গ্রামের কৃষক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, তার ২৫ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ১৯ বিঘা জমির মিনিকেট পাকাধান ক্ষেতের পানিতে নুয়ে পড়ে আছে। হারবেস্টার মেশিন দিয়ে ধানগুলো কাটা সম্ভব নয় বলেই বাধ্য হয়ে চড়ামূল্যে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে গত কয়েকদিনে প্রায় ১২ বিঘা জমির ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন। এবার মিনিকেট ধান বিঘাতে ৩০-৩২ মণ ফলন হয়েছে। তবে দফায় দফায় ঝড়োবৃষ্টিতে পাকাধান গাছ নুয়ে পড়ায় অনেক ধান ঝরে গেছে। এতে বিঘাপ্রতি ১৮ থেকে ২০ মন ধান পাওয়া যাচ্ছে। একারণে আবাদে এ বছর কৃষকরা অনেক আর্থিক লোকসানে পড়েছেন।
উপজেলা এলুয়ারি ইউনিয়নের বানাহার পানিকাটা গ্রামের হারবেস্টার মেশিন মালিক আনোয়ার সাদাত ম-ল বলেন, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার জন্য উপজেলার প্রায় প্রত্যেক এলাকার কৃষকরা যোগাযোগ করছেন। কিন্তু চাহিদানুযায়ী সকলকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে হারবেস্টার মেশিন না থাকলে ক্ষেতের ধান অনেকাংশই ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যেতো।
ভিয়াইল ইউনিয়নের কৃষক দুলাল রায় বলেন, অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও সঠিক সময় ধান কাটা শ্রমিক মিলছে না। ঝড়-বৃষ্টিতে ধান মাটিতে পড়ে গেছে আগেই। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে।
ধান কাটা শ্রমিক আমিনুল ও জয়নাল বলেন, আমরা ১০ থেকে ১২ জনের দল নিয়ে চুক্তিতে কৃষকের ধান কেটে চলেছেন। দিনে প্রায় তিন বিঘার মতো জমির ধান কাটছেন তারা। দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষেতের ধান ৮ হাজার টাকা এবং নুয়ে পড়া ক্ষেতের ধান সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা বিঘা চুক্তিতে কাটছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, এ বছর উপজেলায় ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছুটা শ্রমিক সঙ্কট থাকলেও আমরা কৃষকদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছি। এতে কৃষকের খরচ কমবে।