বেআইনিভাবে একইস্থানে ভিন্ন খেয়াঘাট দেখিয়ে সরকারী নির্দেশ অমান্য করে ঘুষের বিনিময়ে ইজারা দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তারীপরোয়ানা জারী হয়েছে পটুয়াখালীর গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দিন ও অবৈধভাবে ঘাট ইজারা নেয়া মোঃ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে।
পটুয়াখালীর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রোখসানা পারভিন এ আদেশ দেন। এরআগে গোলখালী ইউনিয়নের বড়গাবুয়া খেয়াঘাটের প্রকৃত ইজারাদারের কাছে পাচ লাখ টাকা ঘুষ দাবী এবং সাত লাখ টাকা ঘুষের বিনিময় অবৈধভাবে আরেকজন ইজারাদারকে খেয়াঘাট ইজারা দেয়ার ঘটনা প্রমানিত হওয়ায় চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে একই আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন পটুয়াখালীর দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হুসাইন।
বৃহস্পতিার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর পর থেকে পলাতক রয়েছেন চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও খলিলুর রহমান এমনকি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও ওইদিন থেকে বন্ধ রয়েছে।
দুদকের অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পটুয়াখালীর গলাচিপা এবং বরগুনা জেলার আমতলীর মধ্যবর্তি নদী গোলখালী। এই নদীতে বড়গাবুয়া খেয়াঘাটটি আন্তঃজেলা খেয়াঘাট। ২০১৯সালের ৪ ফেব্রুয়ারী বাংলা ১৪২৬সালের জন্য বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে যথানিয়মে সিডিউল কিনে ১০লাখ ৮০হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে এই ঘাটটি ইজারা পান মোঃ রিয়াজ মিয়া। কিন্তু দাবী কৃত পাচ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ইজারাদারকে ইজারা প্রদানে বাধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে সম্পূর্ন বেআইনীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান নাসির মাত্র সাত লাখ টাকা ঘুষের বিনিময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আগেরই স্থানেই বড়গাবুয়া টু বড়গাবুয়া লিখে জনৈক খলিলুর রহমানকে ইজারা দেয়। যেটি সম্পূর্ন অবৈধ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, সরকারী ইজারা প্রদানকৃত খেয়াঘাটের দুই মাইলের মধ্যে নতুন কোন খেয়াঘাট সৃষ্টি বা নতুন নামে কোন খেয়াঘাটের ইজারা দেয়ার কোন বিধান স্থানীয় সরকার আইনের কোথাও নাই। তা সত্বেও চেয়ারম্যান নাসির ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমতার প্রভাবে ঘুষের বিনিময়ে একই স্থানে নতুন নাম দিয়ে ঘাটের ইজারা প্রদান করেছে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ ঘটনার পর প্রকৃত ইজারাদার রিয়াজ উদ্দিন ২০২০সালের ১৩মার্চ পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুর্নীতি দমন আইনে চেয়ারম্যান নাসির ও ইজারাদার খলিলুরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তখন বিজ্ঞ আদালত মামলটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক পটুয়াখালী অফিসকে আদেশ দেন। এরপর দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত শেষে পটুয়াখালী দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হুসাইন আসামি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন গত ৮ই মার্চ। এরপর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন।
মামলার বাদী মোঃ রিয়াজ উদ্দিন জানান, চেয়ারম্যান নাসিরের কারণে আমি আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। নানাভাবে হয়রানির শিকারও হয়েছি। আমাকে বার বার প্রাণনাশের হুমকীও দিয়েছে। আমি এর বিচারের জন্যই মামলা করেছি। আশা করি বিজ্ঞ আদালত সঠিক বিচার করবে। তিনি জানান, গ্রেপ্তারী পরোয়ানার পরপরই চেয়ারম্যান নাসির গা ঢাকা দিয়েছে।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আনোয়ার হোসেন জানান, এখনও আদালতের কপি হাতে পাইনি। ওয়ারেন্টের কপি পেলে পরবর্তি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।