আশাশুনি উপজেলা কোদন্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে স্কুলের শিক্ষক, কমিটির সদস্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ফলে ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
স্কুলের ১০ শ্রেণির এক ছাত্রী প্রধান শিক্ষক দুখীরাম ঢালীর কাছে বিশেষ ক্লাসে পড়তো। সেই সুবাদে তিনি ছাত্রীকে মোবাইলে অশ্লিল প্রস্তাব, ম্যাসেঞ্জারে অশ্লিল ভাষায় চ্যাট করে নগ্ন ছবিসহ ভিডিও কলে নিজেকে নগ্ন অবস্থায় আসার জন্য প্রস্তাব দেন। এবং ৪ এপ্রিল বিকাল ৪ টায় বিশেষ ক্লাসের পরে একাপেয়ে উড়না টেনে শ্লীলতাহানী ও স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার অভিযোগ এনে থানায় মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়। এনিয়ে অনেকগুলো পত্রপত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ, ভিকটিমের ভিডিও ও চ্যাটের অংশ বিশেষ ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য একাধিকবার স্কুল ও এলাকায় সাংবাদিকরা গমন করেন। এ সময় স্কুলের এসএমসি সভাপতি সরোয়ার হোসেনসহ কমিটির সকল সদস্য, সহকারী প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার মন্ডল, সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের সাথে প্রতিদিন সকালে একই মটর সাইকেলে স্কুলে গিয়ে বিশেষ ক্লাসে পড়ানো অপর শিক্ষক আবু মুছাসহ অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলী, কয়েকজন অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে পৃথক পৃথক ও প্রকাশ্যে অনেকের সামনে কথা বলা হয়।
অফিস কক্ষে বসে কথা হলে শিক্ষকরা একবাক্যে বলেন, প্রধান শিক্ষকের কোন অনৈতিক আচরণের ঘটনা অদ্যাবধি ঘরেটি, এঘটনা ঘটার অভিযোগ এক মাস অতিক্রান্ত হলেও তারা কেউই শোনেননি। ঘটনার যে তারিখ দেখানো হয়েছে, ঐদিন ও আগে পরে দু’দিন স্কুলে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। ফলে সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে সাধারণ মানুষ ও কাজের সাথে জড়িতরা ছিল। কোন ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসেনি ও বিশেষ ক্লাসও নেওয়া হয়নি। তাছাড়া ৪ এপ্রিল স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা আশাশুনি শিক্ষা অফিসে ছিলেন। বিকালে কোন শিক্ষক স্কুলে এসেছিল তা তারা জানেননা বা শোনেননি। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ভিকটিমের মামা স্কুলের দপ্তরী হিসাবে কাজ করে। তার নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ডের কারণে প্রধান শিক্ষক তাকে শোকজ করেন। এতে সে ক্ষুব্ধ ছিল। এখন তারই ভাগ্নি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনৈতিকতার অভিযোগ এনেছে এবং শোকজ প্রাপ্ত মামাই মামলার স্বাক্ষী। অপর স্বাক্ষীও তার মামা। এঘটনা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। ঘটনা সম্পর্কে স্বাক্ষী দপ্তরীর সাথে কথা বললে তিনি শোকজন করার কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি।
১০ম শ্রেণির ছাত্রী ও ভিকটিমের সহপাঠী মিনারা জানায় সে প্রধান শিক্ষকের কাছে দীর্ঘকাল বিশেষ ক্লাস করে। ভিকটিম মাত্র দু’দিন ক্লাসে এসেছিল। যে দু’দিন এসেছিল ভিকটিমের সাথে তারা একসাথে স্কুলে ঢুকেছে ও একসাথে বেরিয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষক কখনো তাদের কাছে আসেনি, কোন খারাপ কথাও কোনদিন বলেননি।
সহকারী শিক্ষক আবু মুছা বলেন, প্রধান শিক্ষকের মটর সাইকেলে তিনি প্রতিদিন স্কুলে এসে পাশাপাশি দু’টি স্থানে তারা বিশেষ ক্লাস নেন। ক্লাস শেষেই স্কুল শুরু হয়ে যায়। স্কুলে কোনরকম অশ্লীল বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ডের বিন্দুমাত্র ঘটনা তারা দেখেনি বা শোনেননি। কৃষি শিক্ষক খলিলুর রহমানসহ অন্য শিক্ষকরা বলেন, প্রধান শিক্ষকের আচার আচরণে কোনরূপ খারাপ কিছু তারা কখনো দেখেননি, শোনেননি। হঠাৎ করে পত্রপত্রিকায় ও ফেসবুকে খবর দেখে তারা হতবাক হয়ে গেছেন। তদন্তপূর্বক প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হোক, দোষী শাস্তি পাক এটাই তারা কামনা করেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, আমি কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলে থাকি। আইনের উর্ধে কেউ না। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করবেন। তাই এনিয়ে বেশী কিছু বলতে চাইনা। তবে আমার কাছে লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ঘটনা তাই কিছু জানার বোঝার চেষ্টা করেছি। ঘটনা দেখানো হয়েছে ৪ এপ্রিল। ঐদিন প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা আমরা শিক্ষা অফিসে ছিলাম। এদিন স্কুল ছুটি ছিল, আবার স্কুলে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হচ্ছিল। ৩ টার দিকে আমি আশাশুনি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি, প্রধান শিক্ষক বললেন তিনি বাসায় যাবেন, এখন আর স্কুলে যাবেন না। আমি স্কুলে এসে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করি। অনেক সময় চলে যায় সেখানে। এরপর সেখানে বহু মানুষের সমাগম ছিল, দোকান পাট ছিল, সংগত কারণে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে কেটে যায়। সুতরাং এমন পরিবেশে এবং প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসায় অভিযোগ নিয়ে আমরা বিব্রত বোধ করছি। চ্যাটের কথা বলতে পারবো না, তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তবে প্রধান শিক্ষকের ফেসবুক আইডি ইংরেজিতে দুখীরাম ঢালী। আর যে আইডি থেকে চ্যাট এর কথা দেখানো হয়েছে সেটি ইংরেজীতে দুখীরাম। ঢালী নেই। ঘটনার একমাস পরে কেন অভিযোগ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যান। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সেটি খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু ভিকটিমের চিৎকারে সেখানে তার মামারা ছুটে গিয়ে ভাগ্নীকে রক্ষা করেন। তখন তো এত মানুষের মধ্যে গোপন থাকার কথা না। কেন ও কিভাবে গোপন হলো, কেন এক মাসাধিককাল পরে প্রকাশ্যে এলো এটি ভাববার বিষয়। তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই লজ্জাস্কর। আমি এর শেষ দেখতে চাই। যদি প্রধান শিক্ষক অপরাধী হন তাকে তার শাস্তি পেতেই হবে। আর যদি অপরাধী না হন তাহলে প্রকৃত অপরাধী কারা সেটিও সামনে আসা দরকার। প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আশ্রয়, পিবিআই এর মাধ্যমে তদন্ত এবং স্পার্টদের সহায়তা নিয়ে ঘটনা উদঘাটনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমার প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্রী (সে আমার সন্তানতুল্য) এমন ঘটনার শিকার হোক সেটি যেমন হতে দেবোনা, তেমনি কোন শিক্ষক (যারা আমাদের শ্রদ্ধারপাত্র) ষড়যন্ত্রের শিকার হোক সেটিও হতে দেবনা। সভাপতির বক্তব্য শেষে উপস্থিত সকল সদস্য ও শিক্ষকমন্ডলী তার সাথে একমত পোষণ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে খুজে বের করে আইনের আশ্রয় নেওয়ার দাবী জানান।