বাগেরহাটের শরণখোলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মানাধীন বেরিবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির আঘাত হানার আগমুহুর্তে এই ফাটলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। বুধবার (১১ মে) দুপুরে শরণখোলা উপজেলার গাবতলা বাজার সংলগ্ন বেরিবাঁধের মাঝে ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা এই ফাটল দেখা যায়। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ফাটলের স্থানে জড় হতে থাকে। এর আগে ফেটে যাওয়া এলাকায় বেরিবাঁধের বাইরে থাকা গাবতলা গ্রামের ছফেদ খানের ১০ কাঠা জমি গাছপালাসহ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়।
জমি হারানো ছফেদ খান বলেন, বেরিবাঁধের বাইরে আমার এক বিঘা (৬৫ শতক) জমি রয়েছে। বুধবার দুপুরের আগমুহুর্তে হঠাৎ করে ১০ কাঠা জমি ডেবে যায়। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় আমার জমি। বাকি জমিতেও ফাটল রয়েছে। যেকোন সময় নদীতে বিলিন হয়ে যেতে পারে। এভাবে বাপ-দাদার অনেক জমি হারিয়েছি আমরা।
এদিকে নির্মানের বাঁধের মধ্যে মাটি না দিয়ে বালু দেওয়ায় এমন ফাটল ধরেছে বলে দাবি করেছেন জন প্রতিনিধি ও এলাকাবাসী।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, শরণখোলা উপজেলাকে রক্ষার জন্য একটি টেকসই বেরিবাঁধ আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। সরকার বরাদ্দও দিয়েছিল। কিন্তু ইচ্ছেমত কাজ করেছে ঠিকাদাররা। যেখানে মাটি দেওয়ার কথা সেখানে বালু দিয়েছে। যার ফলে নির্মান সম্পন্ন হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। অতিদ্রুত ফাটলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে শতশত মানুষের জমি ও বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হবে বলে দাবি এই জন প্রতিনিধির।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই আলম সিদ্দিকি বলেন, ভাঙ্গনের খবর পেয়ে আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিইআইপি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন।
সিইআইপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, শুনেছি বেরিবাঁধের একটি জায়গায় ফাটল ধরেছে। আমদের লোকজন ঘটনাস্থলে যাবে। যতদ্রুত সম্ভব ফাটলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সরকারি হিসেবে এই দিনে প্রায় ৯‘শ ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সিডরের আঘাতে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার। স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেরিবাঁধ। গণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে “উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)” নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মান শুরু হয়। এই বেরিবাঁধের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে।