পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। আবাদকৃত বোরো ধান এখন পানির নিচে। ডুবে গেছে পাকা ধানের খেত। পলিথিনের ভেলা বানিয়ে ধান রক্ষার চেষ্টায় ব্যস্ত কৃষকেরা। বিল থেকে ধান আনার পর বিভিন্ন সড়কের পাশে তা স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। যে ধান কেটে ডাঙ্গায় তোলা হচ্ছে,তা আর গোলায় যাচ্ছেনা। কারণ শ্রমিকের দ্বিগুণ মজুরী দিতে হচ্ছে সেই ধান বিক্রি করে। উপজেলার বিভিন্ন বিলের ধান ডুবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। কৃষকেরা বলছেন,পানিতে তলিয়ে যাওয়া খেত থেকে দুই-তৃতীয়াংশ ধান তুলতে পেরেছেন তাঁরা। আর পানিতে থাকা বাকি ধান নষ্ট হচ্ছে। এদিকে এলাকায় শ্রমিকসংকট চলছে। বেশি মজুরি দিয়েও তাঁরা ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছেন না। ফলে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। চরম ক্ষতের মুখে পড়েছেন তাঁরা,তাঁদের এখন মাথায় হাত।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা বললেন,জমি থেকে সবেমাত্র পাকা ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। বিলে পানি ঢোকার মুখ চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের কিনু সরকারের জোলায় বড় একটি স্লুইসগেট রয়েছে। গেটটি বিকল হওয়ায় মাত্র দুই দিনের মধ্যে বিলে পানি ঢুকে ধান ডুবে গেছে। একইসাথে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় বড়াল,গুমানী ও চিকনাই নদী দিয়ে বিলে পানি ঢুকে ডুবতে থাকে একের পর এক বোরো ধানের জমি। উপজেলার বিলচলন,ছাইকোলা,হান্ডিয়াল,হরিপুর,ুনমাইচড়া ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠের কয়েক হাজার একর ধানের জমি পানিতে ডুবে যায়। পানি থেকে ধান তুলতে শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। ৫০০/৬০০ টাকা মজুরির শ্রমিকের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে,বিস্তীর্ণ চলনবিলজুড়ে থই থই পানি। এর মধ্যে ডিঙি নৌকা,পলিথিনের নৌকা ও ভেলা ভাসিয়ে ধান কাটা চলছে। ভেজা ধান এনে পালা করা হচ্ছে সড়কে। একদিকে পানি থেকে ধান তোলা, অন্যদিকে মাড়াই। যেন দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না চাষিরা।
কৃষকেরা আরো বললেন,এই ধান দিয়ে সারা বছরের খাবার জোটে। সেই ধান এখন গলার কাটা হইছে। না পারছি খেতে রাখতে, না পারছি ঘরে তুলতে। আগামীতে খাদ্য সংকটে পড়বে কৃষক পরিবার।
তাঁদের ভাষ্য,প্রতি বিঘা জমিতে ধান আবাদে বীজ-সার-কীটনাশক ও শ্রমিক মিলে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘাপ্রতি ধান মেলে ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত। এবার শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় খরচ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে পানিতে ভিজে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এবার বিঘাপ্রতি ধান মিলছে ১৭ থেকে ১৮ মণ পর্যন্ত। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা দরে। ফলে লোকসান গুনতে হবে তাঁদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম বিল্লাহ বলেন,স্লুইস গেটের কারণে ধান ডোবেনি। গেটের ১৪টি পাল্লার মধ্যে দুটি বিকল হয়েছিল। সেটিও বন্ধ করা হয়েছে। মূলত সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়ার কারণে যমুনায় পানি বেড়েছে। এতে বিলে কিছু পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ৩শ’ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে।