দেশের বহুল আলোচিত অর্থ পাচারের নায়ক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার ও তার প্রায় সকল সহযোগীদের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুরে। সহযোগীদের অন্যতমরা প্রায় সকলেই গ্রেফতার হলেও এখানো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন তার প্রধান সহযোগী অনঙ্গ মোহন রায়। অনঙ্গ মোহন রায় পলাতক থাকলেও প্রচন্ড দাপটে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তার পরিবারের লোকজন। তিনি গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠছে। অনঙ্গ মোহন রায় ছিলেন প্রশান্ত কুমার হালদারের কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের পাট মিল ও ময়মনসিংহের ভালুকার কুমির প্রকল্পের ম্যানেজার। তার বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীঘিরজান গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, মাত্র ১৫ বছর আগে অনঙ্গ মোহন রায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। প্রশান্ত কুমার হালদারের ন্যায় চির কুমার অনঙ্গ মোহন রায়ের (৭৫) সাথে ঘনিষ্টতার সূত্র ধরে প্রশান্ত তাকে (অনঙ্গ) দায়িত্ব দেন তার দুটি মিল ও কুমির প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। অল্প সময়ের ব্যাবধানে অনঙ্গ মোহন রায় স্থানীয়দের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন শিল্পপতি অনঙ্গ নামে। অনঙ্গর পিতা জোনার্ধন রায় ছিলেন একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে অনঙ্গ ছিলেন মেঝো। বড় ভাই মৃত বিধান রায় ছিলেন একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক জানান, অনঙ্গ মোহন রায় একসময় দু’বেলা খেতে পারতো না। সেই অনঙ্গ রাতারাতি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। বাড়িতে বিশাল ভবন করে। শুনেছি ঢাকায়ও কয়েকটি ফ্লাট আছে। এলাকায় নামে-বেনামে জমি কিনেছে। আর এসব অর্থের মালিক হয়েছেন পিকে হালদারের সহযোগীতায় ও তার অর্থ লুট-পাট করে। সরেজমিন তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার দীঘিরজানে গিয়ে দেখা গেছে তার বাড়িতে একটি বিরাট দ্বিতল ভবন। ভবনে তার ছোট ভাই বিকাশ রায় পরিবার নিয়ে বাস করেন। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুটের ওই সুসজ্জিত বাড়িটিতে থাকেন তার ছোট ভাই বিকাশ রায়ের পরিবার। ছোট ভাই বিকাশের স্ত্রী গৌরি রায় জানান, আলোচিত পিকে হালদার বিপুল পরিমানের অর্থ কেলেংকারীর পর থেকে ভাসুর অনঙ্গ রায় পলাতক রয়েছেন। কেননা, পিকে হালদার ভাসুর ৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ওই টাকার জন্য তিনি গ্রেফতার হতে পারেন এমন ভয়ে গত প্রায় দু’বছর ধরে তিনি পলাতক রয়েছেন। তবে তিনি কোথায় আছেন তা জানা নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, পিকে হালদার তেমন খারাপ লোক ছিলেন না। যখন থেকে এই অনঙ্গ মোহন রায়ের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে তখন থেকেই অনঙ্গ মোহন রায়ের কুপরামর্শে খারাপ পথে দাবীত হয়। অনঙ্গ মোহন রায়ের বাড়িতে সংবাদ কর্মীরা গেলে তার পরিবারের লোকজনের কারণে স্থানীয়রা কোন সংবাদকর্মীর কাছে মুখ খুলতে পারেন না এমনটি অভিযোগ স্থানীয়দের। অনঙ্গ মোহন রায়ের বাড়ির পাশের খোকন মিস্ত্রীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অনঙ্গ মোহন রায় মাত্র ১৩-১৪ বছর আগে অন্যের বাড়িতে লজিং থাকতো। আজ আলাউদিনের চেরাগ পেয়ে বাড়িতে বিরাট বিল্ডিং করেছেন। নামে বেনামে অনেক জমি কিনেছেন। এলাকায় আমরা তাকে শিল্পপতি অনঙ্গ হিসাবে চিনতাম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনঙ্গ মোহন রায়ের বাড়ির এক নারী গৃহবধু জানান, পারিবারিক ভাবে শুনেছি অনঙ্গ রায় গ্রেফতার এড়াতে ভারতে গেছেন।