বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের বোঝা গত পাঁচ বছর থেকে বহন করছে। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের শননার্থী বিষয়ক সংস্থাসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা ও দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশে তাদের বসবাস চললেও তাদের প্রত্যাবাসনের কাজ তেমন এগোয় নি। অন্যদিকে বিশ^জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা সমস্যা ও সংকট বাড়ছে। এর সাথে করোনা মহামারি যুক্ত হয়ে মানুষের অসহায়ত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক আরো কিছু সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশি মিয়ানমারের চলমান রোহিঙ্গা সংকট, সেখানে সামরিক সরকার আসায় নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। আফগানিস্তানে সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক সংকট থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। তাছাড়া ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত বিশ^জুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। দেশে দেশে মুদ্রাস্ফিতির কারণে বেড়ে গেছে নিত্য পন্যের দাম।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থার হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ সফর কালে গত ২৫ মে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থার ঢাকা অফিসের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশংকার কথা ব্যক্ত করেন। প্রতিবছর যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনার (জেআরপি) মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সেখানে দাতা দেশগুলো সহায়তা করে থাকে। ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জানান, এখন পর্যন্ত জেআরপিতে চাহিদার ৭৫ শতাংশ তহবিল পাওয়া গেছে। অন্যান্য সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যেন নজর না হারায়। রোহিঙ্গাদের বোঝা বাংলাদেশ পাঁচ বছর থেকে বইছে। তাই এই সহযোগিতা অবশ্যই কমানো যাবে না। বিশ^ ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো সংস্থা যেন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি পুরোপুরি মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশ সাধ্যমত কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক সংস্থাও মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক করকারের সাথে যোগাযোগ করছে। দেশটির আগের সরকার সংস্থার সাথে যে চুক্তি করেছিল, তা মিয়ানমারের সামরিক সরকার কয়েকমাস আগে নবায়ন করেছে। তবে রাখাইন সহ সমগ্র মিয়ানমারে কাজ করতে সংস্থাকে অনুমতি নিতে হবে।
জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনার মনে করেন, মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনে সুষ্ঠ, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির আরও সাহায্য প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের বাস্তচ্যুতির মূল কারণ ও এর সমাধান নিয়ে বিশ^কে এগিয়ে আসতে হবে। মানবতার বিবেক জাগ্রত করে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে নিরাপদে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমার সামরিক সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।