ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো সুদৃশ্য সাইনবোর্ড, ঝকঝকে কিংবা জীর্ণশীর্ণ ভবন আর সামনে বিভিন্ন ডিগ্রীধারী কিছু সংখ্যক চিকিৎসকের নামের তালিকা ঝুলিয়ে নিবন্ধনবিহীন কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে জমজমাট ব্যবসা পরিচালনা করছেন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশিরভাগ মালিক। অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা লাইসেন্স আছে বললেও অনুসন্ধানে তার যথার্থতা পাওয়া যায় না। আবার অনেকে লাইসেন্স নবায়ন করার কথা বলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। লাইসেন্স না করা কিংবা নবায়নের জন্য আবেদন না করার যুক্তি হিসেবে এসব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা দুষছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ নীতিমালাকে। দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সময়ের পর নিবন্ধনহীন কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন সতর্ক বার্তার পরও কালীগঞ্জ উপজেলার ৪৩ টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে পাত্তা দিচ্ছে না।
কালীগঞ্জের প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চুক্তি, পরিবেশ ছাড়পত্র, অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স, ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টারের জন্য নারকোটিক লাইসেন্স, প্রতিটি ক্লিনিকের জন্য তিনজন এবং ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টারের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, প্রতিটি ক্লিনিকের জন্য ৬ জন ডিপ্লোমা নার্স ও ৩জন করে ঝাড়ুদার থাকার কথা। এই সমস্ত নিয়মকানুন মেনে কালীগঞ্জের কোনো ক্লিনিক ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে সেবার মান ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা কেউ তোয়াক্কা না করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
কালীগঞ্জ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্ট্রিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আহমেদ জানান, পূর্বের থেকেও কালীগঞ্জে ডায়াগনষ্ট্রিক ও ক্লিনিক ব্যবসায়িরা নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অধিক সচেতন। সকলের লাইসেন্স রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলতে চাই, সকলের যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবসায়ে সর্বপ্রকার লাইসেন্স নিয়েই ব্যাবসা করা উচিত।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন জানান, কালীগঞ্জে যেসব ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক ব্যাবসায়ী তাদের ব্যাবসা পরিচালনা করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিবন্ধন বিহীন যে সকল প্রতিষ্ঠান ব্যাবসা পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।খুব শিঘ্রই এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী জানান,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার গুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। প্রথমে আমরা অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে অভিযান পরিচালনা করে সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি। কালীগঞ্জে ৭ টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্ট্রিক সেন্টার রয়েছে। প্রতমে সে গুলা আমরা বন্ধ করবো, পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ব্যবসা পরিচালনার জন্য যেসব নিয়ম-নীতি রয়েছে তা মানা হচ্ছে কিনা দেখা হবে।