সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা আসার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিদরা। ব বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু দক্ষিন ভারত হয়ে মিয়ানমারকে স্পর্শ করে বাংলাদেশের টেকনাফে প্রবেশ করে। এর মধ্যে দক্ষিন ভারত উপকূল ও মিয়ানমারে চলে এসেছে বলে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মৌসুমি বায়ু হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ২ মে। এবারে মৌসুমি বায়ু বেশ শক্তিশালী হতে পারে। সেই সাথে আসা বিশাল মেঘমালার কারণে বৃষ্টি বেশি হতে পারে। ফলে এবার বন্যা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি মাত্রায় হতে পারে। স্বাভাবিক বন্যা দেশের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। আর মাঝারি মাত্রার বন্যায় তা ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হয়ে থাকে।
জুন মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু দেখা যায় বা বর্ষাকাল শুরু হয়। এবার জুনের প্রথম থেকেই দেশে বর্ষণ শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের আবহাওয়া বিদরা। তাই মৌসুমি বায়ুর গতি প্রকৃতি নিয়ে গত সপ্তাহে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সাথে আবহাওয়া অধিদপ্তর একটি সভা করছে। সেখানে বলা হয়, জুন মাসের শুরু থেকে মাঝারি মাত্রার শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ফলে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি নামিয়ে বাংলাদেশে বর্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। আরও তিন-চারদিন পর রাজধানী সহ সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর কারণে বৃষ্টি বেড়ে এবার জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে গঙ্গা ও ব্রক্ষ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর চলে যেতে পারে। ফলে বন্যার তান্ডবে পড়তে পারে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বর্ষা আসার আগের সময়টা মেঘ-বৃষ্টি ও বজ্রপাত বেশি থাকবে। অর্থাৎ আগামী তিন-চারদিন বাংলাদেশের উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও পশ্চিম বঙ্গে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। চলতি বছরের মে মাসে প্রায় পুরো সময় জুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে কোথাও কোথাও একই সময় বয়ে গেছে দাবা-দহ। মেঘ-বৃষ্টি গরমের মিশ্রণে কেটেছে পুরোটা মাস। এখন জুনের শুরুতেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীতে পানি জমে জনজীবনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়। এবারের অতিবৃষ্টিতে অবস্থা কি হবে, তা বলা যাচ্ছে না। অবশ্য ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন আশার বানী শুনিয়ে রেখেছে, এবার বৃষ্টির পানি আধাঘন্টার মধ্যে সরে যাবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কারো নেই। তবে দুর্যোগে জানমালের ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবত। দুর্যোগ শুরুর আগে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যথাযথ খাবার ও চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষকে নিরাপদ করা সম্ভব। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন এবং যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।