আর কত বছর নদীর গর্জ শুনতে হবে, প্রতিদিন নদী ভঙ্গনে রাতে ঘুম আসে না মোগো। সন্ধ্যা নদী ভাঙ্গানকুলের সেতারা বেগন এ কথা বলেন। শতবর্ষ ধরে ভাঙছে সন্ধ্যা ও কঁচা নদী। অনেকদিন থেকে শুনে আসছি নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। মৎস্য ও প্রাণী সম্পাদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কয়েকটি জনসভায় নদী ভাঙন প্রতিরোধের কথা জানিয়েছেন, বছর দুই/এক আগে পানি সম্পাদ মন্ত্রণালযের প্রতি মন্ত্রী জাহীদ ফারুক ভাঙন কবলিত এলাকা পরির্দশন শেষে ভাঙন রোধের কথা উল্লেখ করেছেন। বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ভাঙন কবলিত এলাকা ভাঙন প্রতিরোধে মাপ-জোপও নিয়েছেন। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা এখন হয়নি। প্রতি বর্ষায়ই সন্ধ্যা নদীতে ভেঙে যাচ্ছে মাইলকে মাইল ফসলী জমি, বসতবাড়ি, পাকা ভবন বাণিজ্যিক এলাকাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাজার বছরের পুরানো স্থাপনা। এছাড়াও পিরোজপুরের একমাত্র স্বরুপকাঠির বিসিক শিল্প নগরী সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের হুমকিতে। নদী ভাঙন কবালিত এলাকা থেকে মাত্র ৭‘শ গজ দুরত্বে রয়েছে বিসিকের ১১৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলো নদী ভাঙণের মুখে, যেকোনো সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। বিশেষ বিশেষ এসব এলাকাগুলো ভাঙন প্রতিরোধের আওতায় না আসলে শতাধিক শিল্প উদ্যোক্তাসহ হাজার-হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে এবং বছরে কোটি-কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। এছাড়াও কৌরিখাড়া পোষ্ট অফিসটি নদী ভাঙন থেকে মাত্র ১০ গজ দুরত্ব যে কোনো সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। মন্ত্রী, এমপি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বক্তব্যতায় সন্ধ্যা নদী ভাঙনরোধে হাজার কোটি টাকা বরদ্দের কথা বলা হলেও প্রকল্পে ফাইল বন্দী অবস্থায় পড়ে আছে মন্ত্রণালয়ে। মাঝে মধ্যে কিছু পাইলিন, ইট-বালুর বস্তা নদীর চরে ফালানো হলেও ভাঙন রোধের কোনো বড় ধরণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এভাবেই কথাগুলো বললেন ভাঙন কুলের স্থানীয় বাসিন্দারা।
সন্ধ্যা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল ও পিরোজপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ ৬১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৯০ মিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা ‘পাউবো” কর্তৃক সন্ধ্যা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং-৯১। এ নদীটি বঙ্গোপসাগরের শ্রেতধারা ধারণ করে ভয়ঙ্কর এ ভাঙন শুরু হয়েছে আরো প্রায় দু“শত বছর আগে। এ নদীর ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থর উদ্যেগ বহুবার নেওয়া হলেও ভাঙন প্রকল্পের ফাইল তালা বন্ধী হয়ে পড়ে আছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে, এমনটিই বললেন সুশীল সমাজ। নদীর ভয়ঙ্কর বাঙনে স্বরুপকাঠি উপজেলার মিয়ার হাট, ইন্দেুর হাট বন্দর, ছারছীনা দরবার শরীফ, জলাবাড়ি বাজার, নাজিরপুর, মুনিনাগ গ্রাম, ব্রাহ্মণকাঠির সড়ক, কুনিয়ারী, মাগুরা, বাড়রা, গনমান, ও কাউখালী বাজার এ ১৪টি শহর ও গ্রামের ১৯টি এলাকায় কয়েক হাজার বসতঘর হারিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে নদীকুলের মানুষগুলো। এছাড়াও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবার। এসব পরিবারগুলো ভয়ঙ্কর নদীর গর্জনে রাতে ঘুম আসে না কখন তাদের ভিটে-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এসব পরিবারগুলোর বছরের পর বছর রাত জাগা স্বপ্নের মাঝেও মাথা গোছাবার ঠাই হয়নি কোথাও। এর মধ্যে অনেকেই সর্বোচ্চ সহায়-মম্বল হারিয়ে অন্যের ভিটে-বাড়িতে কোন রকম আশ্রায় নিয়েছেন। ১৮৯৭ সাল থেকে ভাঙন মুরু হয়ে এষনও ভাঙন অব্যহত রয়েছে। তবে সন্ধ্যার ভাঙনে এসব এলাকার সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রাস্ত হচ্ছে দক্ষিণ- উত্তর কৌরিখাড়া ভাঙন কুলের হাজার পরিবার। এসব পরিবারগুলো বিভিন্ন গ্রামে পরের ভিটা-বাড়িতে ঠাইগুছিয়ে নিলেও কর্মস্থান হারিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। এছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পথ নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে শত বছর আগেই। পিরোজপুরের ভঙন কবলিত নদীগুলো হচ্ছে সন্ধ্যা, কচাঁ, কালিগংঙ্গা, ভলেশর, বেলুয়া আড়িয়াল খাঁ। জম্মলগ্ন থেকে চলার পথে এই প্রমত্ত নদী দুই কুলের অসংখ্য স্থানের তীরে গ্রাস নিয়েছে বলে পিরোজপুরসহ স্বরুপকাঠিতে (নেছারাবাদ) উল্লেখযোগ্য কোনো জনপথ গড়ে উঠেনি। স্বরুপকাঠি ভায়া বরিশাল থেকে ভায়া ঢাকা ব্রাহ্মণকাঠির এ সড়ক পথটি ২১ বছর আগেই নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নদী পরাপারের, মিযার হাট-ইন্দেুর হাটের খেয়াঘাট ও দুরপাল্লা যাত্রীদের ছারছীনা লঞ্চঘাট, কৌরিখাড়া লঞ্চঘাট,কাউখালী লঞ্চঘাট নদী ভাঙনে একাধিকবার স্থান্তর করা হলেও এসব গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এখনো ভাঙান অব্যহত রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্বরুপকাঠির মিয়ার হাট ও ইন্দুরহাট বন্দর, বিসিক শিল্প নগরীসহ শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান সন্ধ্যা নদীর ভাঙন থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের রক্ষা করা উচিৎ।