'ঠান্ডা গরম বন্যা খরা কিংবা জলোচ্ছাস,বাঁচিয়ে দিবে ঠিক সময়ে একটু পূর্বাভাস’।এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে দেশের অন্যান্য উপজেলার ন্যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রায় তিন বছর আগে প্রতিটি ইউনিয়নে অটোমেটিক রেইনগেজ এবং কৃষি আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে স্থাপন করা হয়।ভবনের ওেযালে সাঁটানো এনালগ ডিসপ্লে বোর্ডটির নেই কোনো কার্যকারিতা। বামিজ পোর্টাল থেকে জেলার আবহাওয়া তথ্য নিয়ে বোর্ডটি নিয়মিত আপডেট করার কথা থাকলেও তা করা হয় না। এই প্রকল্প থেকে কোন ভাবেই কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন না। প্রকল্পটির শুরুর দিকে ৩০ জন কৃষক নিয়ে একটি ট্রেনিং এর আয়োজন করে উপজেলা কৃষি অফিসে। সেই ট্রেনিংয়ে এ অংশগ্রহণ করেছিলেন নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আবদুস ছালাম, ছোট ঘিঘাটি গ্রামের আতিয়ার রহমান,মনোহারপুর গ্রামের আবদুল মেহেদী হাসান এবং কুল্লাপাড়ার রকি হাসান। প্রত্যেকের সাথে কথা বলে জানা যায়,কৃষি অফিসে আবহাওযা পূর্বাভাস সম্পর্কিত একটি ট্রেনিং হয়েছিল। সেখানে আবহাওযার পূর্বাভাস সম্পর্কিত বামিজ পোর্টাল সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেওয়া হয়। তবে এর কোনো সুফল আমরা চাষের ক্ষেত্রে পাইনা।
সরেজমিনে উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে গিয়ে দেখা যায়,কৃষক রহিম মিয়ার দেওয়ালে টাঙানো আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড এর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন,কপালে তার দুশ্চিন্তার ভাঁজ। ঐ নিকট কি দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, মাঠে আমার পাকা ধান, আর আকাশে মেঘ। এত পরিশ্রম করে চাষ করে ধান যদি ঘরেই না তুলতে পারি তাহলে খাবো কি? বৃষ্টির খবরটা যদি নির্দিষ্ট ভাবে জানা যেত তাহলে আমরাও সেই অনুয়ায়িধান কেটে ঘরে তুলে ফেলতাম। শুনেছি এটি নাকি আবহাওয়া বোর্ড, এখান থেকে জানা যাবে আজ বৃষ্টি হবে কি হবে না। এ কারণেই বোর্ডটির দিকে লক্ষ করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। কাজেই নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের মাঝে সময়মতো পৌঁছে দেওয়া কৃষি প্রধান বাংলাদেশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে প্রতিকুল আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যেমন ফসল রক্ষা করা যাবে তেমন অনুকূল আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যাবে। সে কারণেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সারা দেশব্যাপী “কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আইসিটি নির্ভর এই গুরুত্বপূর্ণ, প্রকল্পটির সুফল দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সেভাবে কাজে আসেনি। ফসল উৎপাদন করে কৃষকের লাভবান হওয়া নির্ভর করে মূলত তিনটি বিষয়ের উপর। সেগুলো হলো সময়মতো ও যথাযথ ফসল ব্যবস্থাপনা; ফসলের উৎপাদন খরচ কমানো ও নিরাপদে ফসলকর্তন। এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৪০৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে অটোমেটিক রেইনগেজ এবং কৃষি আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলায় সম্পূর্ণরূপেই আবহাওয়া ডিসপ্লে বোর্ড গুলো অকার্যকর। রাখালগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে আবহাওযার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য স্থাপিত এই বোর্ড এর কার্যকারিতা নেই। ফলে কৃষকও এখান থেকে আবহাওয়া সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাচ্ছেন না। এ কারণে আমি এটি ডিজিটালাইজ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদেরকে নিয়ে এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক ট্রেনিং এর ব্যাবস্থাও করতে হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মোহাম্মদ মোহাইমেন আক্তার জানান,বামিজ পোর্টালের মাধ্যমে জেলার আবহাওযা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু নির্দৃষ্ট করে কোন উপজেলার আবহাওয়া কেমন থাকবে তা বলা যায় না।ফলে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে স্থাপিত অটোমেটিক রেইনগেজ এবং কৃষি আবহাওয় ডিসপ্লে বোর্ড এ সঠিক তথ্য সন্নিবেশিত করা সম্ভব হয় না। তবে এই প্রকল্পটির ডিজিটালাইজড করার কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাব।