মিয়ানমার থেকে জোর পূর্বক বাস্তুভিটা উচ্ছেদ হওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘ পাঁচ বছর থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিলেও তাদের কারণে উগ্রবাদ ও অপরাধ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ভারতে আসামের গুয়াহাটিতে গত ২ মে দু’ দিন ব্যাপী এক অন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও জাপান, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়ান অং এ সম্মেলনে তার সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মোমেন উদ্বোধনী অধিবেশনে বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে অনেকগুলো ক্ষেত্রে পরস্পরের হাত ধরার পাশাপাশি এ অঞ্চলের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের এখনই ফেরত পাঠানো উচিৎ।
আব্দুল মোমেন আরও বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশে নির্দিষ্ট অঞ্চলে রয়েছেন। সেখানে অপরাধ ও উগ্রবাদ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘিœত করতে পারে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের নাগরিকদের বাসস্থান ও খাদ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাদের আশ্রয় সুরক্ষিত করেছে। কিন্তু এটা বরাবর চলতে পারে না। এটা একটা ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা। তাদের ফেরত পাঠানোর কাজ এখনো শুরু হয়নি। ইতোমধ্যে কিছু অঞ্চলে, যেখানে তারা রয়েছে, সেখানে অপরাধ ও উগ্রবাদ বাড়ছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। জাতিসংঘসহ অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া ও তাদের পুনর্বাসনের জন্য সোচ্চার হলেও কার্যত: তারা দেশে ফিরতে পারেন নি। অংসান সুচির সরকার অবশ্য তাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটি চুক্তি করলেও তা কার্যকর করতে গড়িমসি করে। পরবর্তীতে মিয়ানমারে সামরিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আর তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশে^ই মুদ্রাাস্ফীতি বেড়েছে। নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে এ বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আর কত দিন খাদ্য আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশে রাখা সম্ভব তা বোঝা যাচ্ছে না। অন্যদিকে রোহিঙ্গা শিবিরে যে ভাবে অপরাধ ও উগ্রবাদ বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। হুমকির মুখে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা। তাই যতদ্রুত সম্ভব জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ভাবে প্রভাবশালী দেশগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যাতে মিয়ানমারের সামরিক সরকার বাধ্য হয়, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে। আমরা মনে করি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মোমেন যথার্থই বলেছেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সবার সম্মিলিত উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।