দেশে প্রায় প্রতিদিনই রেলপথের কোনো না কোনো জায়গা থেকে লাশ উদ্ধার হচ্ছে। জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল-এই ৬ বছরে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি লাশ পাওয়া গেছে রেললাইন ও এর পাশে। এর মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। অধিকাংশই নিহত হয়েছেন দুর্ঘটনায়। লক্ষ করা যায়, অদূরে বিকল্প সড়ক থাকা সত্ত্বেও অনেকে অভ্যাসবশত রেললাইনের মাঝখান দিয়ে চলাচল করেন। শুধু তাই নয়, অনেকে হাঁটার সময়ও মোবাইল ফোনে কথা বলেন; কেউবা হেডফোনে গান শুনতে শুনতে রেললাইনের ওপর দিয়ে বা পাশ দিয়ে হাঁটেন। অথচ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী রেলপথের দুই পাশে কয়েক ফুট জায়গায় চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে, যা অনেকেই জানেন না। মাত্র কয়েক মিনিট সময় বাঁচানোর জন্য অনেকে দ্রুতগামী ট্রেনের সামনে দিয়ে সড়ক পার হওয়ার চেষ্টা করেন। জীবন বাজি রেখে এ কাজ করতে গিয়ে অনেকেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হন। অনেকে আবার রেললাইনের পাশে পসরা সাজিয়ে বসেন। লক্ষ করা যায়, ট্রেন আসার পূর্বমুহূর্তে লাইনম্যান দু’দিকে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা বন্ধ করে দিলেও কেউ কেউ নানা কৌশলে লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া আচরণের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। দুঃখজনক হলো, অনেকে চলন্ত ট্রেনের পাশে সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে সবার সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সেলফি, টিকটক বা ভিডিও ধারণ-এসব বিষয়ে যাতে কারও বাড়তি কৌতূহল সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল হতে হবে। কিছু মানুষ গল্পগুজব করার জন্যও রেললাইনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা বেছে নেন। তাদের সচেতন করার উপায় কী? ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে হরহামেশা আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া দুষ্কৃতকারীরা অন্যত্র হত্যা করে লাশ ফেলে যাচ্ছে রেললাইনে। কোনো কোনো স্থানে রেললাইনের গা ঘেঁষে হকাররা নানারকম পসরা সাজিয়ে বসে মাইকের মাধ্যমে ক্রেতাদের দৃষ্ট আকর্ষণের চেষ্টা করেন। মাইকের উচ্চ শব্দে বোঝার উপায় থাকে না পাশ দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হলে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কমে আসবে। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি রেললাইনের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ও হাটের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হলে এ বিষয়ক বহু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।