আজকের দিনের চেয়ে এক সময়কার দ্বি ফসলী জমিতে উৎপাদন অনেক কম হতো। তবে তখন মাটি ছিল জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যবান। মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতি আজকের দিনে জমিগুলো ৩ অথবা কোন কোন জমি ৪ ফসলীতে রুপান্তরিত হয়েছে। বর্তমান যান্ত্রিকীকরন আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুন বেশি। এজন্য বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। যা মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট করছে। প্রতিনিয়ত পানি,বাতাস দূষিত করছে। এ রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ ফসলও খাদ্য শস্য যা উৎপাদন হচ্ছে তা সুস্থ মানবদেহ ছাড়াও নিরাপদ নয়। কেননা এ খাবার খেয়েই মানুষ প্রতিনিয়ত নানা কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাচ্ছে। এদিকে জীবন বাঁচানোর জন্য বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য এখন সব মহলের সময়ের দাবি। নিরাপদ খাদ্যের জন্য জমিতে রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব উপাদান বাড়ানোর শ্লোগান বর্তমান সরকারের কর্তা ব্যক্তিদেরও মুখে মুখে। উৎসাহিত করতে প্রতিবছর নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনকারীদের বাছাই করে সরকারীভাবেই সন্মননার দেয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় জমিতে জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। তবে নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে কৃষকেরা অন্যান্যের মত সচেতন নয়। তারা চান কৃষিতে রাসায়নিক ব্যবহার করে হলেও তাদের লোকসান পোষাতে।ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ব্যাতিক্রমী পরিবেশবান্ধব কৃষক রয়েছেন। তার চিন্তা ক্ষেতে জৈব উপাদানের ঘাটতিতে মাটির সুস্থতা হুমকির মুখে পড়বে এটা কৃষক আবদুল জলির মোল্যা মেনে নিতে একেবারেই রাজি নয়। তিনি নিজের মত করেই জৈব যুদ্ধে নেমেছেন। তার যুদ্ধের অংশ হিসেবে এ বছরও তিনি ৮ বিঘা জমিতে জৈব সার সমৃদ্ধ ছেড়া মুগ কলাইয়ের চাষ করেছেন।তার মতে কলাইয়ের পাতা ও কান্ড পঁচে জমি মূল্যবান জৈবসার সমৃদ্ধ হবে। অন্যদিকে অল্প খরচে বোনাস ফসল হিসেব অধিক লাভ ঘরে তুলবেন। কৃষক জলির মোল্যা উপজেলার বেথুলী গ্রামের আদর্শ কৃষক মরহুম আবদুল মজিদ মোল্যার ছেলে।
উপজেলার কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, এ বছর এ উপজেলাতে মোট ১ হাজার ৫০ হেক্টোর জমিতে ছেড়া বারি-৬ জাতের মুগ কলাই চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু চাষ হয়েছে ৯’শ ১৮ হেক্টোর জমিতে। মুগ কলাইয়ের চাষ সব সময়ই জমির মাটিতে জৈব উপাদান ও উর্বরাক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডাল জাতীয় এ ফসল মুগ কলাই বোনাস ফসল হিসেবে অত্যান্ত কম খরচে কৃষকেরা অধিক লাভের মুখ দেখবেন। কৃষি অফিস আরও জানায়, কলাই চাষে জমিতে জৈব সারের আস্তানা তৈরী হয়। জমি হয় অধিক উবর্রাক্ষম।
পরিবেশবান্ধব কৃষক আবদুল জলিল মোল্যা জানান, প্রতি বছরের মত এবছরও তার নিজের ৮ বিঘা জমিতে ছেড়া বারি মুগ- জাতের কলাইয়ের চাষ করেছেন। ক্ষেতে কলাইও হয়েছে বেশ। তিনি আরও বলেন, জমিতে আজ জৈব সারের বিরাট অভাব। এ কারণে অনেক কৃষকের ভরাক্ষেত নষ্ট হয়। কৃষকেরা কীটপতঙ্গের আক্রমণের দোষারোপ করে অনাবরত রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার করেও ফল পাননা। তিনি বলেন, আসলে ওই সকল জমিতে রাসায়নিক বিষের আধিক্যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। সে কারনেই জমিতে জৈব সারের ভাবনা আগে দরকার।লাভজনক এ ফসল চাষে জমিতে একদিকে জৈব উপাদান বাড়ছে অন্যদিকে বোনাস ফসল হিসেবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। তিনি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বেথুলী গ্রামের এক সময়কার আদর্শ কৃষক মরহুম আবদুল মজিদ মোল্যার ছেলে।
অন্য বছরের মত এ বছরও তিনি অল্প খরচে বেশি লাভের ফসল বারি -৬ জাতের ছেড়া মুগ কলাইয়ের চাষ করেছেন। তার আশা এ কলাই চাষে একদিকে বোনাস ফসল হিসেবে বেশি লাভ করবেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ক্ষয় হয়ে যাওয়া মাটির জৈব উপাদান পূরন হয়ে মাটি হবে সবল ও উর্বরাক্ষম।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাইমেন আক্তার জানান, ছেড়া মুগ কলাই অত্যান্ত লাভজনক চাষ। কলাইয়ের পাতায় সবুজ সারে ভরা। কান্ড পঁচেও শক্তিশালী জৈব সার হয়। এছাড়াও কলাই গাছের মূলে গোলাকৃতির নুডিউল উৎপাদন হয়। যাকে বলা হয় নাইট্রোজেনের খনি। ফলে কলাই ক্ষেতে ইউরিয়া সার লাগেই না। কলাই চাষ করা জমিতে পরে অন্য ফসল চাষ করা হলে জৈব সারসহ অন্যান্য সারের অভাব থাকে না। এ কৃষিকর্মকর্তা আরও বলেন, কলাই ভালো হলে প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৫ মন কলাই পাওয়া যায়। এজন্য বেশি দিন অপেক্ষা করা লাগে না। আবার সারাবছর কলাইয়ের দামও ভালো পাওয়া যায়। ফলে এ চাষে একদিকে জমির মাটি হচ্ছে উর্বর স্বাস্থ্যবান। অন্যদিকে আসছে কম খরচের অধিক লাভের বোনাস ফসল।