স্বাধীনতার পর থেকে রাজধানী ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হলেও সময়ের ব্যবধানে তা যানজট আর বায়ু দূষণের নগরী হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। তবে গত অর্ধ শতাব্দিতে ঢাকার আয়তন বেড়েছে, সিটি করপোরেশন একটি খেকে দু’টি হয়েছে। সুন্দর সুন্দর আকাশ ছোঁয়া ইমারত হয়েছে। কিন্তু নাগরিক সুবিধা বাড়ে নি। এখনো বিশে^র অবাসযোগ্য ১০টি শহরের একটি ঢাকা। প্রায় দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। নির্বাচনের আগে রাজধানীকে সচল ও সুস্থ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দু’মেয়র। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকার যানজট তো নিরসন হয় নি, বরং বেড়েছে। অন্যদিকে বসবাসের যোগ্যতা বিচারে তেমন উন্নতি হয়নি। যত্রতত্র ময়লার ডাস্টবিন, একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, পয়-নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি সহ নানা সমস্যায় নগরবাসী নাকাল।
গত ৩মে ইন্সটিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আ-ইপিডি) ভার্চুয়ালি এক সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা বলেন, মেয়র আতিকুল ইসলাম ১২ টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে স্মার্ট বাসস্টপ ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, পথচারী বান্ধব ফুটপাত,পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণসহ ছয়টি প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তবায়ন হয় নি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিছু রাস্তায় দ্রুতগতির যানবাহন আর কিছু রাস্তায় শুধু মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা পথ।
তবে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; চালু করা হয়েছে নগর পরিবহন ব্যবস্থা। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় রুট পারমিটবিহীন বাস বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং যানজটের কাড়নে যানবাহনের গতি কমেছে। ২০০৭ সালে ঢাকার সড়কের যানবাহনের গড় গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২১ কিলোমিটার। এখন তা ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। নাগরিক সেবার অন্যান্য ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা বিড়ম্বনা। তাই ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা ছাড়া নাগরিক সুবিধা বড়ানো সম্ভব নয়। এজন্য নগর এলাকায় সড়ক বাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও খেলার মাঠ প্রকৃতি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক সেবা বাড়াতে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে তা কাক্সিক্ষত ফল দিচ্ছে না।
তাই ওয়ার্ড কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ না থাকায় এলাকাভিত্তিক অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, বরং তা বাড়ছে। রাজধানীর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা বাড়ানো নিয়ে অনেক কথামালা শোনা গেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নি। বিশে^র বড় বড় মহানগরীর নগর পিতারা নাগরিক সমস্যা নিয়ে জনগণের সাথে মাসে একবার কথা বলেন। তাদের সমস্যা সমাধানে তৎপর হোন। কিন্তু আমাদের নগর পিতারা শুধু আশার বানী শোনান, কিন্তু বাস্তবায়ন করেন না। জনসেবা করার জন্যই তারা নির্বাচন করেন। নির্বাচিত হবার পর কেন তারা জন-বান্ধব হবার চেষ্টা করেন না। জন-ভোগান্তি নিরসনে উদ্যোমী হন না। আমরা চাই সব সীমাবদ্ধতার মাঝেও নগর পিতাদের আন্তরিকতায় নাগরিক সমস্যা সমাধান হবে। নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেন।