দেশে ধান ওঠার ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। চালভেদে দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞ, এমনকি ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত একে অস্বাভাবিক মনে করছেন। এই পর্যায়ে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। চালের অবৈধ মজুদ খুঁজতে এবং বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সারা দেশে অবৈধ মজুদবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কয়েক দিনে এমন বেশ কিছু মজুদ পাওয়াও গেছে। আর এতে ফলও ফলেছে। প্রকাশিত অনুযায়ী পাইকারি বাজারে চালের দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা কিংবা তারও বেশি কমে গেছে। দ্রুতই দাম আরো কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সুযোগ পেলেই তাঁরা কোনো বিশেষ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। সেটা চাল হোক, ডাল হোক, পেঁয়াজ কিংবা অন্য কোনো পণ্যই হোক। অভিযোগ আছে, এসব ব্যবসায়ীর কিছু সিন্ডিকেট রয়েছে, যেগুলো একসঙ্গে কাজ করে। এর ফলে বাজারে তাঁরা বেশ ভালো রকমের প্রভাব ফেলতে পারেন। যেমনÑ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কিছু মিলার ও ব্যবসায়ীর অশুভ সিন্ডিকেটের প্রভাবেই সম্প্রতি চালের বাজার এমন অস্থির হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) নেতারাও মনে করেন, সামান্য কিছু ব্যবসায়ীর অশুভ তৎপরতার কারণেই বাজার এভাবে অস্থির হয়ে ওঠে। সারা দেশের সব ব্যবসায়ী এই অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীর অনৈতিক কর্মকা-ের দায় নিতে পারেন না। সম্প্রতি মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি’ বিষয়ে মতবিনিময়সভায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ধরপাকড়কে সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। দেশে চালের প্রধান জোগান আসে বোরো ধান থেকে। বোরো ধান উত্তোলন মাত্র শেষ হয়েছে। এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণই থাকতে পারে না। অভিযোগ আছে, কিছু মিলার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। কিছু মোকাম মালিক চালের সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য, দাম বাড়িয়ে অধিক লাভে চাল সরবরাহ করা। সরকার সঠিক পদক্ষেপই নিয়েছে। অবৈধ মজুদবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। সরকারকে তা করতেই হবে। কারণ ভোক্তার স্বার্থ দেখা সরকারের কর্তব্য। আমরা অত্যন্ত খুশি যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনসহ অনেক সংগঠন কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ীর অনৈতিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। দেশে ধান-চালসহ পণ্য মজুদের সুনির্দিষ্ট আইন আছে। বলা আছে, কত টন উৎপাদনক্ষমতার একটি চালকল কত টন ধান বা চাল মজুদ করতে পারবে। সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে আইন নেই বা ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট নয়, সেসব ক্ষেত্রে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। কোনোভাবেই অল্প কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে ভোক্তাদের স্বার্থ ও অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবে না। অবৈধভাবে যারা ধান-চালের মজুদ করে দাম বাড়াছে সেইসব ব্যবসায়ীর প্রত্যেককেই প্রতিহত করতে হবে।