চট্টগ্রামের সীতাকু-ের সোনাইছড়ি কাসেম জুট মিলস্ কেশবপুর বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৫জনের মৃতুদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নয়জন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মী রয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। নিঁখোজ রয়েছেন অনেকে। হতাহতদের মধ্যে ডিপোর কর্মরত কর্মকর্তা,শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক রোববার দুপুরের দিকে বিএম ডিপো পরিদর্শনে আসেন এবং বলেন,“আমরা সর্বোচ্ছ চেষ্টা করছি আহতদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য। তাৎক্ষনিক আহতদের ৫০ হাজার টাকা ও অগ্নিকাণ্ডে নিহত পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।
এদিকে বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহতদের চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে ছুটি বাতিল করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকল চিকিৎসক,নার্স ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের।
গত শনিবার রাত ৯টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার সময় এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট। আগুনের লেলিহান শিখার ঘনত্ব যত বাড়ছে সারি সারি লাশের সংখ্যাও বাড়ছে।
হতাহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। অতিরিক্ত রোগীর চাপে অনেককে ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নগরীর অন্যান্য হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালেও (সিএমএইচ) রোগী চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী চিকিৎসকদের দ্রুত হাসপাতালে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। এ ছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনন্ত এক শতেরও অধিক দগ্ধকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেউ দগ্ধ, কেউ মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন। বিস্ফোরণে ডিপো সংলগ্ন পাশবর্তী গ্রাম মোল্লা পাড়া অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়ে মারাত্বক ধরনের ক্ষয় ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে এলাকাবাসি। শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কাশেম জুট মিল গেট এলাকায় অবস্থিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে যান। এ সময়ই সেখানে বিকট শব্দে কন্টেইনারে থাকা ক্যামিকেল ভর্তি একটি কন্টেইনার বিস্ফোরণ হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের আরও নয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কুমিরা ফায়ার সার্ভিস প্রথম ওই কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর পায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা খবর পান। আগুন নেভানোর জন্য একটি টিম ঘটনাস্থলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িসহ কর্মীরা আগুনে পড়ে যায়। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিস্ফোরণে কনটেইনার ডিপোর আশপাশের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদ ও আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ির থাই গ্লাস জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে। আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। কনন্টেইনারে রাসায়নিক দ্রব্য থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আগুনে পুরো কন্টেইনার ডিপো ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আংশকা করছে কতৃপক্ষ। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে বিএম ডিপোর মালিক পক্ষ,বিভিন্ন আমদানী-রপ্তানি কারক ও সিএন্ড এফ প্রতিষ্ঠান।
ঘটনাস্থলে কাজ করছেন বাংলাদেশ পুলিশ,র্যাব,ফায়ার সার্ভিস,আনসার বাহিনী,বাংলাদেশ সেনা বাহিনী,নৌ-বাহিনীসহ গাউসিয়া কমিটি সীতাকু-,বাল্ড ডোনান্ট সীতাকু-,সিপি বাংলাদেশ সীতাকু-।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম-৪ সীতাকু- সংসদসদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলম,বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন,জেলা প্রশাসক মোঃ মোমিনুর রহমান,এসপি এস.এম রশিদুল হক,চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান এম শাহজাহান।
আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএম ডিপোর জিএম নাজমুল খান চৌধুরী বলেন,“ক্যামিকেল অথবা গার্মেন্টস্ পন্য থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। ক্যামিকেল কন্টেইনারগুলো আমরা রপ্তানির উদ্দ্যোশে মজুদ রেখেছি,প্রতিটি কন্টেইনার ডিপো এভাবে ক্যামিকেল রপ্তানির উদ্দ্যোশে মজুদ রাখে। আগুনে ডিপোতে রাখা আনুমানিক ৩০/৪০টি কোম্পানীর মালামাল রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ আগুনের কারণে প্রতিটি কোম্পানীর মামামাল পুড়ে যায়। যার ক্ষতির পরিমান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর আমাদের পুরো ডিপো ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন,“ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে। আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রনে এসেছে। কন্টেইনারগুলো আস্তে আস্তে সরিয়ে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চলছে। মালিক পক্ষ থেকে সব্বোচ্ছ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই পর্যন্ত ৪৫ জন মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারমধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সকল সংস্থা আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন।