মো. শাহ আলম বাকপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী দুলুফা বেগম শারিরিক প্রতিবন্ধী। শাহ আলম রিকশা চালিয়ে ও দুলুফা কাঁথা সেলাই করে সংসার চালান। দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খেতে হয় ওই দম্পত্তিকে। এ অবস্থায় নিজের একটি বাড়ির করার স্বপ্ন তো আকাশ-কুসুম।শাহ আলম ও দুলুফা দম্পতির নিজেদের বাড়ি হয়েছে। সরকারিভাবে বাড়ি পেয়ে সেখানে তারা ইতিমধ্যেই বসবাস শুরু করেছেন। এখন যেন কৃতজ্ঞতা জানানোর পালা। বাড়ির নেপথ্যে থাকা আইনমন্ত্রীকে কাঁথা দিয়েছেন ওই দম্পতি।
প্রতিবন্ধী শাহ আলম ও দুলুফা দম্পতি থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কেন্দুয়াই আশ্রয়ণ প্রকল্পে। দুলুফার হাতে বুনা ফুলের নকশার কাঁথা শনিবার সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি বিশ্রামাগ্রারে কাঁথা নেওয়ার সময় মন্ত্রী নিজেই ছবি তোলার আহবান জানান এবং কাঁথাটি গায়ে দিবেন বলে আশ^স্থ করেন। এ দম্পতির সার্বিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে সব ধরণের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি মন্ত্রী নির্দেশনা দেন। মন্ত্রীর এমন মহানুভবতা উপস্থিত সবার মাঝে আলোচনার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়।উপহারের কাঁথা মন্ত্রীর হাতে দেওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রাশেদুল কায়সার ভূঁইয়া, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুদ উল আলম, আইনমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারি মো. আলাউদ্দিন বাবু, আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাহবুদ্দিন বেগ শাপলু, সাধারন সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন নয়ন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কসবা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দিয়ে ঢাকায় ফিরতে মন্ত্রী আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে আসেন।
মন্ত্রীকে কাঁথা দিতে পেরে বেজায় খুশি দুলুফা বেগম। কথা হলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘কাঁথা দেওয়ার সময় আইনমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি এটা গায়ে দিবেন। এরচেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে। ওনার কল্যাণে আমি ঘর পেয়েছি। এখন নিজের হাতে বানানো একটি কাঁথা প্রধানমন্ত্রীকে দিতে পারলে মরে গিয়েও কোনো ধরণের দু:খ থাকবে না।’তিনি জানান, ঘর পাওয়ার পর থেকেই মন্ত্রীকে কাঁথা দেওয়ার বিষয়টি মাথায় আসে। অনেকদিন আগে থেকেই কাঁথা বানানো শুরু করেন। তবে মন্ত্রী আসার খবরে সপ্তাহ দু’য়েক আগে থেকে কাঁথা বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়। হালকা হলুদ রংয়ের কাপড়ে বানানো এ কাঁথায় ফুল, লতা-পাতা আঁকা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে রেশমি ও রেলসুতা।
আবেগতাড়িত দুলুফা বেগম বলেন, ‘খুব কষ্টে দিন কেটেছে। মানুষের বাড়িতে থেকেছি। ১৬ বছরের বড় ছেলে বেকারিতে শ্রমিকের কাজ করে। সাড়ে ১১ বছর বয়সি মেয়ে মাদ্রায় পড়ে। প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর কারণে এখন নিজের একটা বাড়ি হলো। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। সরকারিভাবে বাড়ি পেয়ে আমি খুব আনন্দিত।’
আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, ‘পরিবারটির সন্ধান পেয়ে প্রথমে প্রতিবন্ধী ও ভিজিডি কার্ড করে দেই। এরপর আইনমন্ত্রীর মহোদয়ের সহযোগিতায় তাদেরকে বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। বাড়ি পেয়ে দুলুফা বেগম শুরু থেকেই মন্ত্রী মহোদয়কে কাঁথা দেওয়ার জন্য আমার কাছে প্রস্তাব করেন। সেই অনুসারে তিনি শনিবার সন্ধ্যায় কাঁথা নিয়ে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে হাজির হন। বিষয়টি জানার পর মন্ত্রী মহোদয়ের অভিব্যক্তিই বলে দেয় তিনি কতটা আনন্দিত হয়েছেন। তিনি নিজে বলে ছবি তুলেছেন এবং কাঁথাটি গায়ে দিবেন বলে জানান।’