চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সোনাইছড়ি কেশবপুর এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী খালিদ হাসান,তথ্য মন্ত্রী ডা.হাছান মাহমুদ,দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
ঘটনার ৩ দিনের মাথায় সোমবার বেলা ২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘটনাস্থল বিএম ডিপুতে আসেন। তিনি বিএম ডিপো এলাকা পরিদর্শন শেষে ১০ মিনিটের মধ্যে চলে যান। এ সময় সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কিছু না বলেই গাড়ীতে উঠে যান। এর আধ ঘন্টা পর ঘটনাস্থলে আসেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী খালিদ হাসান, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিকাল সাড়ে ৫টার সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তথ্য মন্ত্রী ডা.হাসান মাহমুদ। তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পরিদর্শন শেষে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এতগুলো লোক মারা যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ব্যথিত এবং আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন খোঁজ খবর নিতে আমাদের ৩ মন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। আমরা ও এধরনের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তাছাড়া দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে মৃত ব্যক্তিদেরকে ১ লক্ষ টাকা এবং আহতদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে তাদের পরিবারকে দেয়া হবে।
তাছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে নিহতদেরকে ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ১ লক্ষ টাকা দেবে। এ ছাড়া চিকিৎসাসহ সব ধরণের সহযোগী করবে সরকার। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৪ সীতাকু- আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমসহ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারী উচ্চ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল চট্টগ্রাম কলেজ হাসপাতালে বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে যান। ডিপো পরিচালনায় বিরাট অবহেলা ছিল : নৌপ্রতিমন্ত্রী
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সীতাকু-ে বিএম কনটেইনার ডিপোটি যারা পরিচালনা করেন তাদের বিরাট অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ঘটনায় মনিটরিং টিমের অবহেলা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।
সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সীতাকু-ে অগ্নিকা-ের ঘটনা বন্দরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে প্রতিবেদন আমাদের দিতে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে এনবিআর ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা যায় কি না আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করবো।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই তদন্ত কমিটিতে এনবিআরের অন্তর্ভুক্তিটা বেশি জরুরি। কী ধরনের পণ্য এখানে আসা-যাওয়া করে, আমরা কিন্তু শুধু হ্যান্ডেলিং করি। এখানে ডিক্লিয়ারেশনটা কাস্টমসের কাছে দিতে হয়Ñআমি এ ধরনের পণ্য নিয়ে আসছি বা পাঠাচ্ছি। এটা আমরা পরে জানতে পারি।এখানে ডেঞ্জারাস যে গুডস, এটা তারা ডিক্লিয়ার করেছে কি না। যদি করে থাকে তাহলে আলাদা মেজার নেওয়ার বিষয় আছে এবং এ ধরনের প্রাইভেট যে কনটেইনার ডিপোগুলো আছে সেখানে যে প্রস্তুতিগুলো থাকা দরকার, যে জনবল থাকা দরকার সেগুলো আছে কি না। থাকলে সেগুলো কাজ করল না কেন? নিশ্চিতভাবেই এগুলো থাকার কথা, তা না হলে তারা অনুমোদনই পাবে না। তাহলে কেন তারা কাজ করল না, এতগুলো হতাহতের ঘটনা ঘটে গেল। এগুলো আমাদের তদন্তের বেরিয়ে আসবে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে পুরোপুরিভাবে বলা সম্ভব নয় আসলে এখানে কী ঘটনা ঘটেছে, দায়টা কার। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে বলা যাবে এবং তখন আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব।
কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে ব্যবস্থা নিতো তাহলে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইএমডিজি নীতিমালা ও আইএসপিএস যে কোড আছে, সে অনুযায়ী কনটেইনার ডিপো পরিচালনা করার কথা। যদি এ দুটি নীতিমালা ও কোড অনুসরণ করে যদি তারা পরিচালনা করে তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ঘটনায় মামলা হবে কি না- এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আসুক। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তথ্য মন্ত্রী ডা.হাসান মাহমুদ ঘটনাস্থল পরিদশন করে কোন রকম বক্তব্য না দিয়ে চলা যাওয়ার সময় গাড়িতে উঠে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেখে আবার নেমে তাদের জড়িয়ে ধরেন এবং আমি খুবই দুঃখ প্রকাশ করছি ও এসব মানবিক কাজে সব সময় প্রথম সারিতে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাসায়নিক থাকা ৪ কনটেইনার চিহ্নিত করে অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে
সোমবার দুপুর ১২টায় এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ডিপোতে থাকা ৪টি কনটেইনারে রাসায়নিক পদার্থ থাকার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এখন এই কনটেইনারগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে অপসারণের চেষ্টা চলছে। এ কারণে ডিপোতে এখনো আগুন জ¦লছে, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি', যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ডিপো কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা গেছে, এই ডিপোতে আড়াই হাজারেরও বেশি কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে ১ হাজার ৩০০টি খালি, ৮০০টি রপ্তানিযোগ্য এবং ৫০০টির মতো কনটেইনারে আমদানি পণ্য ছিল। এ ছাড়া, ২৪টির মতো কনটেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল।