দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে শেরপুর
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪ টি পুরাতন গাড়ি। একই জায়গায় পড়ে থাকায় একদিকে
যেমন গাড়িগুলো নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে চুরি হচ্ছে এইসব গাড়ির যন্ত্রপাতি।
অকেজো এইসব গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি আর বাকিগুলো সংস্কার করে জনগণের সেবার
আওতায় নেয়ার প্রয়োজন হলেও এই বিষয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল ও ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
দীর্ঘদিন থেকে পড়ে রয়েছে ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স, জিপ ও মাইক্রোবাস। গাড়িগুলো
সামান্য নষ্ট হওয়ার পর আর মেরামত না করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তা
হাসপাতালের যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন অযতœ আর অবহেলায়
মাটিতে পড়ে থাকা গাড়িগুলো এখন প্রায় অকেজো। এইসব যানবাহনের কোনটি ১৫ বছর,
আবার কোনটি ৮-১০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি সরকার ও সরকারের
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ৩ টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স রহস্যজনক কারণে
অল্প সময়ের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রায় ৪ বছর ধরে গাড়ি ৩টির জায়গা
হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালের এক কোণায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের অভিমত,
১৪টি গাড়ির মধ্যে ৪-৫টি গাড়ি এখনও সংস্কার করার মতো রয়েছে। আর বাকিগুলো
নিলামে বিক্রি হলে কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হতো।
জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় কয়েকটি গাড়ির
ইঞ্জিনসহ যন্ত্রপাতিও নেই। সুযোগ বুঝে চোরেরা নিয়ে গেছে বা ভিন্নভাবে
খোয়া গেছে। এখন শুধু গাড়ির বডিগুলো পড়ে রয়েছে। এখানকার পাহারাদাররাও
জানে না কিভাবে খোয়া গেছে যন্ত্রপাতিগুলো।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আবুল হোসেন বলেন, এই হাসপাতালে মাত্র একটি
সরকারী অ্যাম্বুলেন্স চালু রয়েছে। অথচ হাসপাতালের পিছনে কয়েকটি
অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এগুলো ঠিক করে চালালে রোগীরা সেবা
পেতো। আবদুর রহিম নামে আরেক সেবাপ্রার্থী বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের
অভাবে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগী ঢাকা-ময়মনসিংহ নিয়ে যেতে হয়। অথচ
নষ্টগাড়িগুলো ঠিক করলে আমরা কম খরচে রোগী নিয়ে যেতে পারতাম। সরকারী
সম্পদগুলো এইভাবে নষ্ট হলেও দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে হাসপাতাল অঙ্গনের
বাইরের স্থানীয় কয়েকজন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বলেন, হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ যদি গাড়ি ঠিক না করে, তাহলে এইসব গাড়ি কেনার জন্য অনেকেই
রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিলামে বিক্রি না করায় দিন দিন গাড়িগুলো আরও
অকেজো হচ্ছে। লাখ লাখ টাকার গাড়িগুলো যত্রতত্র ফেলে না রেখে তা নিলামে
বিক্রি এবং বাকিগুলো সংস্কার করে জনগণের সেবার আওতায় আনার দাবি জানান
তারা।
শেরপুর সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকারী গাড়ি বিক্রির
জন্য নিলামে তোলার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল ও সময়সাপেক্ষ। গাড়িগুলো
স্থানীয়ভাবে নিলামে দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। তাই গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করা
সম্ভব হচ্ছে না। তবে শীঘ্রই এইসব গাড়ির তালিকা তৈরি সাপেক্ষে নিলামে
বিক্রির অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি
পেলেই সেগুলো নিলামে তুলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।