চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত গাড়িচালক মাসুদ মিয়ার মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে জামালপুরের সরিষাবাড়ী ভাটারা ইউনিয়নের বয়সিং নিজ গ্রামের বাড়ী পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। তার গ্রামে বাড়িতে বাবা-মা -স্ত্রী- সন্তান এবং অন্যান্য স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।
জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের বয়সিং গ্রামের
কৃষকদম্পতি খলিলুর রহমান ও জমিলা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মাসুদ মিয়া। পড়াশোনায় মাধ্যমিক পেরোতে পারেননি। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পাড়ি জমান সৌদি আরবে। পাঁচ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন মাসুদ। এরপর ২০১৫ সালের দিকে নতুন কর্মসংস্থানের জন্য ছুটে যান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সীতাকু-ে কনটেইনার ডিপোর একটি কম্পানিতে গাড়িচালকের চাকরি নেন। সেখানে তিনি এক সপ্তাহ দিনে এবং পরের সপ্তাহ রাতে ডিউটি করতেন। গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের সময় তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান। মাসুদ পরিবারের বড় ও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে স্ত্রী সন্তানসহ গোটা পরিবারটি এখন নিঃস্ব হয়ে গেলো।
মাসুদ ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে সাত বছর বয়সী এক মেয়ে এবং দুই বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী সুমি আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে মাসুদ সীতাকু-ের তার কর্মস্থল ওই বিএম কন্টেইনার ডিপোর কাছেই ভাড়াবাসায় থাকতেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে মাসুদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসে স্বজনরা। পরে সকাল ৮ টায় জানাজা শেষে পারিবারিক করস্থানে তাকে সমাহিত করার করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বামীহারা শোকার্ত সুমি আক্তার কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন, তার সাথে শেষ কথা হয় বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই। অগ্নিকাণ্ডের খবর তার মুখ থেকে সে জানায়। তখন তাকে বাসায় চলে আসতে বলেন স্ত্রী সুমি আক্তার। বের হবার কোন সুযোগ নাই বলে ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে আর কোন যোগাযোগ করতে পারি নাই। পরের দিন তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে সে মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, স্বামীছাড়া দুই অবুঝ শিশুর লালনপালনসহ সামনের দিনগুলো কীভাবে তার কাটবে, সেই চিন্তায় দুচোখে অন্ধকার দেখছেন সুমি আক্তার। দেশ বাসীর কাছে দোয়া চান স্বামীর জন্য। সন্তানদের জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার এস আই মোরশেদ আলম বলেন, মাসুদের মরদেহ সকাল ৬ টার দিকে বয়সিং তার নিজ গ্রামের বাড়ী পৌঁছে। সকাল ৮টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।