কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে রাতের আঁধারে মুখ চেপে ধরে, হাত-পা বেধেঁ ও মোবাইল চার্জারের তার গলায় পেচিয়ে এক নারীকে হত্যা ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ৪ জন যুবকের বিরুদ্ধে। আহত নারী শাহিদা বেগম নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৯মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বেরুবাড়ী ইউনিয়নের চর বেরুবাড়ী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
আহত শাহিদা বেগমের স্বামী দুলাল মিয়া বাদী হয়ে পার্শ্ববর্তী শফিকুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, আনিছুর রহমান ও নুরু মিয়ার বিরুদ্ধে নাগেশ্বরী থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও ঘটনার ১০ দিন পেড়িয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব রয়েছে প্রশাসন ।
অভিযোগ নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের চর বেরুবাড়ী গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধে রোববার (২৯মে) দিবাগত রাত সাড়ে ৮টায় দুলাল মিয়া আবাসন মোড়ে বাজার করতে গেলে বাড়ি ফাঁকা পেয়ে রাতের আঁধারে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পার্শ্ববর্তী আব্দুস সাত্তারের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৬), আবু সিদ্দিকের ছেলে আশরাফুল আলম, আবুল কাশেমের ছেলে আনিছুর রহমান ও আজিজুল হকের ছেলে নুরু মিয়া দুলালের স্ত্রী শাহিদা বেগমের উপর আক্রমণ চালিয়ে তার মুখ চেপে ধরে, হাত-পা বেধেঁ ও গলায় মোবাইল চার্জারের তার পেঁচিয়ে হত্যা ও ধষর্ণের চেষ্টা করে এবং শাহিদা অচেতন হয়ে পড়লে ওই দৃস্কৃতিকারীরা ঘরের ড্রয়ার ভেঙ্গে ৫২ হাজার টাকা ও সর্ণালঙ্কার লুট করতে থাকে। এমন সময় প্রতিবেশী নুর আলম ও মেহেরজাহান বেগম শাহিদা বেগমের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুস্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘরের ভেতের থেকে শাহিদা বেগমের গোংরানির শব্দ শুনে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে তার মর্মান্তিক অবস্থায় হতা-পা বাঁধা দেখে চিৎকার করেন এবং তার বাঁধা হাত-পা ও গলায় পেঁচানো তার খুলে দিতে থাকেন। এ সময় তাদের চিৎকারে পাশর্^বর্তী মোহাম্মদ আলী, নজরুল ইসলাম, শারমিন বেগম, মাছুম ও ফকরুল ইসলামসহ স্থানীয়রা শারমিন বেগমকে উদ্ধার করেন এবং তার শারিরিক অবস্থার অবনতী দেখে তাৎক্ষণিক নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে প্রতিবেশী মেহেরজান, জানায় তিনি তার ছেলেসহ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শাহিদার গোঙ্গানির শব্দ শুনে ঘরে গিয়ে দেখতে পান তার হাত পা বাঁধা ও গলায় চার্জার পেছানো। পরে আরও লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
আহত শাহিদা বেগম বলেন, তখন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ। বাড়ি ফাকাই ছিলো। তিনি টিউবওয়েলের পাড় থেকে পানি খেয়ে বের হয়ে দেখেন অভিযুক্তদের একজন লুকিয়ে আছেন। সে এখানে রাতের বেলা কী করে জানতে চাইতেই পিছন থকে আরও ৩জন জাপটে ধরেন মুখ চেপে ধরে ঘরের ভিতরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এসময় আমি চিৎকার করার চেষ্টা করলে চার্জারের তার ও রশি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে ধরে শ^াসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। পরে কী হয়েছে আমি জানি না। কিছুক্ষণ পরে দেখতে পাই প্রতিবেশীরা আমার গলায় পেঁচানো রশি ও চার্জার খুলছেন। এরপর তারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমি টানা ৩দিন কোনো কথা বলতে পারিনি। এখন ওই অভিযুক্তরা অভিযোগ তুলে নেয়াসহ প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত।
শাহিদা বেগমের ভাশুর আনোয়ার হোসেন জানায়, তারা থানা ও এএসপিঅফিসে অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। গরিব মানুষ বলে কি আমরা ন্যায় বিচার পাব না? আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশরাফুল আলম ও আনিছুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলাম না। কারা করেছে আমরা জানি না। সহকারী পুলিশ সুপার (নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী সার্কেল) সুমন রেজা বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেব। কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, উপরোক্ত বিষয়ে স্বাক্ষী প্রমাণ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।