৫ জুন বাংলাদেশসহ সারা বিশে^ ‘একটাই পৃথিবী ’ শ্লোগান নিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হলো। বাস্তবতা হচ্ছে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে মানুষের স্বেচ্ছাচারিতায়। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বড় বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা গুলোয় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে মানুষ বাড়ি ঘর ছাড়া হচ্ছে। ভিটেমাটি হারিয়ে সেসব মানুষ শহরের দিকে ছুটছে বেঁচে থাকার তাগিদে। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মানুষ শুধু রাজধানীতেই আসছে। এ বাড়তি মানুষের বসবাস, পয়োনিস্কাশন ও কর্মসংস্থান করতে গিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে। এদিকে রাজধানীর নদী ও খাল গুলো নির্বিচারে দখল হচ্ছে। ভরাট করে বড় বড় স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। যে খাল গুলোতে মাছ চাষ হওয়ার কথা থাকলেও মশা চাষ হচ্ছে এবং নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে।
এককথায় ঢাকার পরিবেশ প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। বায়ু দূষণের দিক থেকে ঢাকা প্রায়ই বিশে^র এক বা দুই নম্বরে অবস্থান করছে। ঢাকার বাতাসে এখন হাইড্রোকার্বন নামের নতুন ধরনের দূষিত পদার্থ দেখা যাচ্ছে। শীতলক্ষ্যা নদীর পানি পরীক্ষা করে তাতে অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে, যা মাছসহ অন্যান্য প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত মানুষের শরীরেও ঢুকে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশ বিদরা ছাড়া অন্যান্যরা সবাই চুপচাপ। জনগণের জন্য রাজনীতি হলেও পরিবেশ নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা ভাবেন বলে মনে হয় না। তারা এ ব্যপারে তেমন উচ্চ বাচ্চ করেন না। অভিন্ন ৫৭ টি নদীর থেকে ৫৪ টি ভারত থেকে প্রবাহিত আর ৩ টি এসেছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে। ফারাক্কা চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে। তিস্তা চুক্তি হয় নি, হওয়ার সম্ভাবনাও কম। নদী অববাহিকায় ভাটিতে অবস্থানের কারণে পরানি প্রবাহের বিষয়ে বাংলাদেশ কার্যকর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। শুল্ক মৌসুমে পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় থাকে। দেশে পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে পানি আইন করা হয়। এ আইনের বিধিমালা হয়েছে ২০১৮ সালে। কিন্তু পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা রয়েই গেছে। দেশের জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশ মানুষ সুপেয় পানির জন্য হাহাকার করছে। আর্সেনিক ঝুঁকিতে আছে প্রায় ৩ কোটি মানুষ আবার কৃষি কাজে পানির অভাবের কারণে একজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণে কৃষক দিশেহারা।
শিল্প কলকারখানার বর্জ্য এবং নানা ইলেক্ট্রনিক্স পন্য থেকে কার্বন নি: সরণ করে পরিবেশ দূষিত করছে। কিন্তু কোনও খাত থেকে কতটা কার্বন নি:সরণ হচ্ছে বা কারা কারা বর্জ্য পুন: প্রক্রিয়াজাত করছেন তার তথ্য সরকারের কাছে নাই। ফলে নজরদারি করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। অ-পচনশীল এসব পলিথিন পরিবেশসহ পয়-নিষ্কাসন ব্যবস্থায় দারুণ ভাবে ক্ষতি করছে।
তাই পরিবেশের প্রতিশোধ থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি শানিÍময় সুস্থ্য বিশ্ব গড়তে হবে সবাইকে সম্মিলিত ভাবে। পরিবেশ বাঁচলে আমরা বাঁচবো। সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।