আগামী ১৫ জুন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৩নং দেউলবাড়ী দোবড়া ও ৯নং কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের নির্বাচন। সোমবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে যাবে প্রাচার-প্রচারণা। তাই শেষ মুহূর্তে সরগরম নির্বাচনী মাঠ। প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত এলাকা। নির্ঘুম রাত কাটছে প্রার্থীদের। ভোটের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। দিচ্ছেন উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি, চাইছেন ভোট। এ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট দেবে এই দুই ইউনিয়নবাসী। এ নির্বাচনে দেউলবাড়ি দোবরা ইউনিয়ন ও কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন নবীন ও প্রবীনসহ মোট ১১ জন প্রার্থী। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে ভোটের লড়াই এবং সেই সাথে হিসাব-নিকাশ। প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। দিন রাত চলছে প্রাচার-প্রাচারণা, উঠান বৈঠক আর সভা। সেই সাথে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগও। এদিকে, ভোটাদের মন জয় করতে প্রার্থীরা দিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ভোটাররা। প্রার্থীরা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোটাদের দ্বারে দ্বারে। স্থানীয় এই নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র, ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর পীর সাহেব চরমোনাই দুইটি দলের ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী নিয়ে স্থানীয় নেতার্কমীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত ৯ জন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে টেনশনে রয়েছে আওয়ামী লীগ। নিজ দলের শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থী বিব্রতবোধ করছেন। ভোটের মাঠে নিজ দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বি থাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজনীতির এই নতুন মেরুকরণে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে অভ্যন্তরীন কোন্দল বিগত দিনে পর্দার অন্তরালে থাকলেও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা এখন প্রকাশ্যে রূপ নিতে যাচ্ছে। বিদ্রোহীরাই দলের মূল প্রার্থীর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে দলের প্রার্থী চরম ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। নির্বাচনকে ঘিরে দলের বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের মধ্যেই বেশি চাঙাভাব বিরাজ করছে। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী আমেজ যেমন বাড়ছে, রয়েছে সহিংসতার আশঙ্কাও। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্গন, বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া, টাকার ছড়াছড়িসহ নানা অভিযোগও রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে। কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের ভোটার মো. ফোরকান বলেন, ভোটারদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস থাকলেও সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তারা ভোট দিতে পারবেন কি না, নির্বাচন সুষ্ট হবে কি না? জেলার উত্তরের জনপদ বিল ও নদী নালা বেষ্টিত দেউলবাড়ী দোবরা ও কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন দুটি। এসব ইউনিয়নের বেশীরভাগ ভোট কেন্দ্রে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা ও ট্রলার। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকা হওয়ায় নির্বাচনকে নিয়ে নানা শংকাও রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। এক সময়ের সর্বহারা অধ্যুষিত এ এলাকা নির্বাচনকে ঘিরে বিগত দিনে দু’জন চেয়ারম্যান নিহতও হয়েছেন। তাই ১৫ জুনের নির্বাচনে এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানা গেছে। নির্বাচন উপলক্ষে রোববার বিকেলে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের নিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগে আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাজিরপুর টেকনিক্যাল কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় পিরোজপুর প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শান্তিপুর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য যা কিছু করা দরকার তা সবই করা হবে। কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসানাত ডালিম (আনারস) অভিযোগ করেন করে বলেন, আমার ইউনিয়নে রাতে বহিরাগত শতাধিক লোক মোটর সাইকেল নিয়ে ঢুকে মহড়া দিচ্ছে। দেউলবাড়ি দোবরা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল আলম বাবুল ফকির (চশমা) বলেন, বহিরাগতরা এলাকায় এসে ঝামেলা করছে। আমার কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বাড়ছে। গ্রামের চায়ের দোকান ও হাটবাজারে চলছে নির্বাচনী আলোচনা। দেউলবাড়ি দোবড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাষ্টার ওয়ালিউল্লাহ্ (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন- রফিকুল আলাম বাবুল (চশমা) ও গাজী মিজানুর রহমান (আনারস)। এ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য ৩৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০জন প্রার্থী। ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৩৩ জন। কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কবির বাহাদুর (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি) বর্তমান চেয়ারম্যান হাসানাত ডালিম (আনারস), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা স্বপন (অটোরিক্সা), শাহ্আলম (চশমা), আরিফুল হাসান (টেলিফোন), বরকাতুল্লাহ্ তালুকদার (ঘোড়া), সাইদুল ইসলাম জান্টু (মটরসাইকেল), ইসলামি আন্দোলনের আবুল কালাম (পাতপাখা)। এ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ৩৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০জন প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৩০০। নাজিরপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার এবিএম ছিদ্দিক বলেন, আমরা চাই সুষ্ট নির্বাচন উপহার দিতে। প্রশাসনসহ আমাদের যা কিছু করার দরকার আমরা তাই করবো নির্বাচন সুষ্ট করার জন্য।