কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জখমে প্রকৃত সার্টিফিকেট না দিয়ে রিপোর্ট পরিবর্তন ও অনিয়ম নিয়ে গত ৩০ মে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি ও প্রধান আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয় এটি। আর তাই টনক নড়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ঘঁটনা তদন্তে গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস থেকে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আল বেলালকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদনÍ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শেখ আনিসুর রহমান ও গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের সহকারী সার্জন এ এফ এম আহসানুল্লাহ।
উল্লেখ্য, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগি কামরুল হোসাইন। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার লুবনা খানম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুর এলাহী অপরাধীদের সাথে যোগসাজসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আঘতের যথাযথ মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়নি। বরং মেডিকেল সার্টিফিকেটে ধারালো অস্ত্রের স্থলে ভোতা অস্ত্রের আঘাত দেখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন মর্মে গত ২৪ মে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত বংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ মেডিকেল এ- ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ঢাকা এর রেজিষ্টার এবং ২৫ মে গাজীপুর সিভিল সার্জন বরাবর জখমের প্রকৃত সার্টিফিকেট প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ জানিয়ে আবেদন করেন।
কামরুল হোসাইন অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, তার হাতে সন্ত্রাসীদের ধারালো অ¯্ররে আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে চিকিৎসা না করেই ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। রোগীর হাতের ক্ষতস্থানে মাংসের ভিতর ও বাহিরে মোট আঠাশটি সেলাই লাগে। কিন্তু সে হাসপাতালে ভর্তি থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরলেও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে তাতে কোথাও ধারালো অ¯্র দ্বারা আঘাতের কথা উল্লেখ নেই। অপরাধীদের সাথে যোগসাজসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আঘতের যথাযথ মেডিকেল সার্টিফিকেট না দিয়ে ধারালো অস্ত্রের স্থলে ভোতা অস্ত্রের আঘাত দেখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান ও অপরাধী পক্ষের করিম নামে একজনকে প্রাইভেট হাসপাতালের এক্স-রে দেখে ঘঁটনার একদিন পর ভর্তি দেখিয়ে হাত ভাঙ্গার মিথ্যা গিভিয়াস সার্টিফিকেট দেয়ার অভিযোগ করেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার লুবনা খানম, ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার অভিজিৎ দাস, সহকারী সার্জন ডাক্তার শামীমা আছাদ ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুর এলাহীর বিরুদ্ধে।
ঘঁটনার দিন, গত ৩ এপ্রিল ২০২২ রোববার সন্ধ্যার পর পাথর ব্যবসায়ী ও কাপড় ব্যবসায়ী দুই সহদর কামরুল ও খাইরুল কালীগঞ্জ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে ইসলামপাড়া বাজারের কাছাকাছি পৌঁছালে ১৪ থেকে ১৫ জন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাদের পথ আটকিয়ে চাইনিজ কুড়াল ও রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তাদের সাথে থাকা ১১ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। আহতদের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশি মুসা, তার দুই ছেলে স্বাধীন ও ইমন এগিয়ে আসলে তাদের ও কুপিয়ে জখম করে ওই সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা রাত সাড়ে আটটার দিকে তাদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সী বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার লুবনা খানম খাইরুল ও মুসা মিয়ার মাথায় প্রায় ত্রিশটি সেলাই করেন। আহত কামরুলের ডান হাতের কোপের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কোন প্রকার সেলাই না করে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকা নিতে দেরি হবে বিধায় স্বজনরা তাকে রাত পৌঁনে এগারটার দিকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার হাতের মাংসের ভিতর ও বাহিরে আঠাশটি সেলাই করেন এবং ওই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেন।
গাজীপুর সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, সার্টিফিকেট পরিবর্তনে অভিযোগ তদন্তে আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। সোমবার (১৩ই মে) ঘটঁনা তদন্তের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার কথা রয়েছে। কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আল বেলালকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদনÍ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শেখ আনিসুর রহমান ও গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের সহকারী সার্জন এ এফ এম আহসানুল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করার চেষ্টা করছি, দুই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দুই রকম সার্টিফিকেট কেনো দিল সেটা ডাক্তাররাই বলবেন। যে যেই সার্টিফিকেট দিয়েছে তাকে সেটার দাযিত্ব নিতে হবে। তদন্ত কমিটির বক্তব্যের পর তাদের জেরা করা হবে কেনো দুই রকম সার্টিফিকেট দেয়া হলো।