নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের প্রায় তিন কোটি টাকা মুল্যের বাংলো পানির দরে অকশনে দেয়া হয়েছে। এর সাথে জড়িত কতিপয় ভুমিদস্যু। এরা সরকারের মুল্যবান জমি বা ভবন পানির দরে অকশন দিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে শহর। আবার কেউবা ডাকে শ্রমিকের শহর। বিহারী বাঙ্গালীর শহর বলেও সৈয়দপুরকে মানুষ ডাকে। এখানে দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে কারখানা। সে সুবাদে রেল কর্তৃপক্ষ এখানে ক্রয় করেন বহু জমি। যার সঠিক হিসাব নেই। ধারণা পাওয়া যায় ১১০ একর জমির ওপরে মুল কারখানা রয়েছে। ওই জমি থেকে ২৫ একর দেয়া হয় পৌরসভাকে। এছাড়াও রয়েছে রেলওয়ে জলাশয়,কৃষিজমি,মহল্লায় মহল্লায় পানির সৌচাগার।
করখানায় চাকুরীরতদের শ্রেণীভেদে রয়েছে বসবাসের রেল কোয়ার্টার। যারা খালাসী তাদের জন্য যৎ সামান্য জায়গায় পাকা ঘর। একটি চকি বা খাট বসে এমনভাবে নির্মিত ওই ঘরগুলো। সেখানে নিদারুন কষ্টে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস।
যারা এক ধাপ এগিয়ে অর্থাৎ বাবু তাদের থাকার স্থান একটু বড়সড়। এক কথায় তেমন মন্দ নয়। আর যারা বাবুদের ওপরে অর্থাৎ বড় বাবু বা অফিস বস তাদের বসবাসের বাংলো কয়েক একর জমির মধ্যে।
স্বাধীনতার পর রেলওয়ে কারখানায় ১৪ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল বলে জানালেন ক্যারেজ সপের মিস্ত্রী শহিদুল ইসলাম।
বাম দলের এক শ্রমিক নেতা জানান,বিএনপি সরকারের সময় গোল্ডেন হ্যান্ড শেকের নামে কয়েক হাজার শ্রমিককে চাকুরী থেকে অবসর দেয়া হয়। এরপর কারখানায় ভুতুরে অবস্থা বিরাজ করে। কমে আসে শ্রমিক সংখ্যা। বর্তমানে আড়াই হাজারেও কম শ্রমিক দিয়ে চলছে কারখানার কাজ। তাছাড়া অভাব রয়েছে দক্ষ শ্রমিকের। বিভিন্ন সময়ে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে আসলে তারা কোন কাজেই জানেন না।
বলা চলে জোড়া তালি দিয়ে চলছে কারখানাটি।
পাশাপাশি কারখানার নিয়ম শৃংখলা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে চুরি হয় তামা,পিতল,লোহা,রংসহ অনেক কিছু। কাজ না করে মাসের শেষে গিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলন এমন ঘটনাও ছিল অহরহ।
দীর্ঘ কয়েক যুগ থেকে রেলওয়ে কোয়াটার সংস্কার না করায় সেগুলো বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। কোন কোন কোয়ার্টার আবার আপনা আপনি ভেঙ্গে পড়েছে। আবার কোন কোন এলাকায় পরিত্যক্ত ওই ভাঙ্গা কোয়ার্টারে জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে অসহায় গরীব মানুষ।
এদেরকেও বসবাসের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে কোন চাকুরীজীবীর মাধ্যমে। কোন কোন মহল্লায় রেলওয়ে কোয়াটার ভেঙ্গে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে অনেকেই।
বার বার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ গুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সৈয়দপুর শহরে আজ বিত্বশালীরা রেলওয়ের জায়গা দখল ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এক কথায় সৈয়দপুরে হরিলুট হচ্ছে রেলওয়ের জায়গা।
এখন আবার শুরু হয়েছে নতুন কৌশল। রেলওেয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ পানির দরে দেয়া হচ্ছে অকশন। এমনি এক ঘটনা ঘটে সম্প্রতি। রেলওয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসের সামনের ১১০ নম্বর বাংলো। এটির বর্তমান বাজার মুল্য প্রায় তিন থেকে চার কোটি টাকা। কিন্তু ওই বাংলোটি দেয়া হয় পানির দরে অকশন।
এ ব্যাপারে রেলওেয়ের প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন জানান,এটি অকশন দেয়া হয়েছে। ঢাকার এক লোক এটি নিয়েছেন। তবে কি কারণে তিনি আসছেন না তা জানা যায়নি। তিনি যদি সময় মত না আসেন তাহলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। এটি কবে,কত টাকা,কে পেল তার নাম ঠিকানা দিতে রাজী নন তিনি।