নারী অধিকার রক্ষা করে নারীদের মর্যাদা সম্পন্ন করতে লড়াই শুরু করেছিলেন, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাজিতপুরের পাঁচ নারী শত বাধার শিঠকল ছিঁড়ে সাফল্যের সিঁড়িতে পৌছেছেন।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনাকারী নারী নাজমা আক্তার : নাজমা আক্তার অর্থনৈতিকভাবে অভাব অনটনের কারণে মা-বাবা তাকে একটি দরিদ্র পরিবারের ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সংসার ভালোভাবে চলছিল। নাজমার দুই সন্তানের জননী। নাজমার স্বামী শাহাবুদ্দিন মিয়া ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে যা পেত তা দিয়ে সংসার চলতো না। ২০০৪ সালে তার স্বামী ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। নাজমার স্বামী একটি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। তার একটি পা কেঁটে ফেলতে হয়। অবশেষে ২০০৭ সালে ব্র্যাকের পল্লী সংগঠনে যোগ দেন এবং মহিলা বিষয়ক অফিসে সেলাই শেখানো হয়। ২০১১ সালে জুন মাসে সেলাই প্রশিক্ষণে চলে যান। ২০১৩ সালে নাজমা মহিলা বিষয়ক অফিস থেকে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন পান। নাজমা আক্তার বর্তমানে এই মেশিন চালিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করেন। তার দুই মেয়ে অনার্স বর্ষে পড়াশোনা করছেন। এখন আর নাজমাকে না খেয়ে থাকতে হয় না। বর্তমানে তিনি অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী জননী।
সামাজিক উন্নয়নে অবদান বাজিতপুর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলনাহার ফারুক : কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ৪ নং সরারচর ইউনিয়নের দক্ষিণ সরারচর গ্রামের বাসিন্দা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলনাহার ফারুক। তিনি ২০১৯ সালে ভাইরাসের সময় দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সরকারি উদ্যোগ নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য বিতরণ করেছেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে জুয়া খেলার আসর বসত সেগুলি তিনি ভেঙ্গে দিয়েছেন। মহিলা বিষয়ক সংস্থার মাধ্যমে তিন শরও বেশি মহিলাদেরকে সেলাই প্রশিক্ষণ বিউটি পার্লার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্ম সৃষ্টি করে সাবলম্বি করে তুলেছেন। বাল্য বিবাহ রোধ যৌতুক বিহীন বিয়ে, নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি বন্ধ করেছেন। ৫০টি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করেছেন। এ ছাড়া অতি দরিদ্র লোকদের মাঝে ভিজিএফ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃ ভাতা সহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে লেট্রিন প্রদান করেছেন। এইসব কারণে তিনি বাজিতপুর উপজেলার সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে সফলতা অর্জন করেছেন।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেতে সাফল্য অর্জনকারী নারী রোজিনা খাতুন : কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা খাতুন তার স্বামী মোঃ ছারওয়ার জাহান। তিনি দুই সন্তানের জননী। বর্তমানে সরারচর শিবনাথ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে কর্মরত রয়েছেন। এইচএসসি পাস করার পর ১৯৯৫ সালে পারিবারিক ভাবে তাকে বিয়ে দেয়। তার হাড়িয়ে যায় অচেনা এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় জীবন। সেই জীবনকে ফিরিয়ে এনে তার বড় ছেলে ইলেক্টনিক্স এর উপর ডিপ্লোমা পাস করেন এবং ছোট ছেলে ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পরবর্তীতে তিনি ২০০৯ সালে স্নাতক, ২০১১ সালে বি.এড, মাধ্যমিক স্কুল নিবন্ধন এবং ২০১২ সালে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। এত দুঃখ কষ্টের মধ্যে তিনি তার জীবনকে আলোকিত করেছেন।
সফল জননী রোকেয়া আক্তার: ১৯৬৪ সালে উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের আতরগাও মইতপুরে তার জম্ম হয়। তিনি পেশায় একজন গৃহিনী। তিনি সাত সন্তানের জননী। বিবহিত জীবনে কঠোর সংগ্রামের মধ্যে তিনি তার সন্তানদের উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করিয়াছেন। দ্বিতীয় সন্তান বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, তৃতীয় সন্তান বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও বিদেশে কর্মরত আছেন। তার এই সফলতার জন্য তার স্বামী ও তিনি নিজে সংগ্রাম করে জীবনকে সফলতার দিকে এগিয়ে যান।
নির্যাতনে বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেন শিউলী খানম: আমার নাম শিউলী খানম। উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের তেগরিয়া। তার বয়স যখন খুব কম তখন তার বিয়ে হয়। বাবা হীন মায়ের উপর খুব কষ্টে তার জীবন কাটে লেখাপড়ার কোন সুযোগ ছিলনা। প্রথমে তিনি খুব কষ্ট করে উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্বামীর সংসারের কাজকর্ম করে রাতের বেলায় পড়াশুনা করতেন। স্বামী হঠাৎ করে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বিপর্যয়ে পড়লেও কোন সময় মনোবল হারান নি। বর্তমানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন। যে কন্যা সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। সব বাধাকে অতিক্রম করে বর্তমান তিনি সফলতা অর্জন করেছেন বলে উল্ল্যেখ করেন। বাজিতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দিলরুবা খানম যায়যায় দিনকে বলেন, এ ৫ জয়ীতা নারী সফলতা অর্জন করায় তিনি এবং তার সংস্থা তাদের পক্ষে কাজ করে যাবেন বলে উল্লেখ করেন।