রংপুরের পীরগঞ্জে ত্রান দপ্তরের ঠিকাদার জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে দেড় কোটি টাকারও বেশি মুল্যের মাটি আবাদি জমি থেকে কেটে ৪ টি রাস্তা পুন: নির্মান করেছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নে ওই কাজ চলছে। এলাকাবাসী তাদের জমি থেকে মাটি কাটতে বাঁধা দিলে কৃষকদেরকে মামলার হুমকি ও বিভিন্নভাকে ধমকী দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার প্রকল্পের পিডি, ডিপিডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন রাস্তগুলোর কাজ পরিদর্শন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে দূর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে দেশের বন্যা কবলিত ১৯ টি জেলায় রাস্তা পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জেও ২ টি প্যাকেজে ৪ টি ইউনিয়নের রাস্তায় মাটির কাজ, এইচবিবি ও প্যালাসাইডিং করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। উপজেলার টুকুরিয়া ও বড়আলমপুর ইউনিয়নের প্যাকেজের রাস্তার আইডি নং ৬৭৭৩৬৯ এ প্রায় ৪ কোটি ৫২ লক্ষ টাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তায় কাজ করা হবে। রাস্তা দুটি হলো, বড়আলমপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুরিয়া শালপাড়া নয়া মিয়া মুন্সির বাজার হতে ধর্মদাসপুর বৈশাখী বাজার ভায়া মছির উদ্দিন চেয়ারম্যান ও মাহফুজার রহমানের বাড়ী পর্যন্ত এবং টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর হারেছের বাড়ী হতে জয়ন্তীপুর ঘাট ভায়া রামকানুপুর পর্যন্ত রাস্তা এইচ বিবি দ্বারা উন্নীত করন। অপরদিকে চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নের প্যাকেজে রাস্তার আইডি নং ৬৭৭৩৯৭ এ প্রায় ৪ কোটি ৫২ লক্ষ টাকায় পৌনে ৫ কিলোমিটার রাস্তায় একই কাজ করা হবে। রাস্তা দুটি হলো কাবিলপুর ইউনিয়নের হলদিবাড়ি পাকারোড হতে মানাসি ফরিদপুর ঘাট পর্যন্ত এবং চতরা ইউনিয়নের গিলাবাড়ী পাকারোড হতে কক্লাস শেল্টার পর্যন্ত ভায়া হয়ালস্ হাউস। এই দুটি প্যাকেজের রাস্তায় মাটির কাজের জন্য দেড় কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দেয়া হযেছে বলে জানা গেছে। অথচ মাসখানেক আগে রাস্তা সংলগ্ন কৃষকের আবাদি জমি গর্ত করে ভেকু দিয়ে মাটি তুলে রাস্তায় দেয়া হয়। এতে সংশ্লিষ্ট জমি মালিকরা বাঁধা দিলে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ভয়ার্ত কন্ঠে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ধর্মদাসপুর ও শিমুলবাড়ীর কাশেম মিয়া, আমজাদ সরকার, তাজেরুল বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, মাটি ক্রয় করে রাস্তায় দেয়ার কথা। আমরা আমাদের জমি থেকে মাটি কাটতে বাঁধা দিলে মামলার হুমকি দিয়ে ঠিকাদারের লোকজন জমি গর্ত করে মাটি কেটে রাস্তায় দিয়েছে। আমাদের মাটির টাকা বা জমির ক্ষতি পুরন দেয়নি। আমরা এই গর্ত ভরাট করবো কিভাবে ? বড় আলমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ইউনিয়নের লোকজনকে হুমকি দিয়ে ওই ঠিকাদারের স্থানীয় কয়েকজন জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়েছে। এতে আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য স্পীকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী আপার ভোটের মাঠে অনেক প্রভাব পড়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদেরকে ক্ষতিপুরনের জন্য দাবি করছি। রাস্তাটির কাজের উদ্বোধনী দিনেও আমি এ ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছি।
কাজটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল বিল্ডার্স এ- কনস্ট্রাকশন লিঃ এর প্রতিনিধি সুমন মিয়া বলেন, আমরা কৃষককে মাটির টাকা দেইনি। এ ব্যাপারে পরে কথা বলবো বলেই তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রকল্পটা পীরগঞ্জে আনার জন্য ডিপিডি মোস্তাফিজার স্যার খুব দৌড়াদৌড়ি করেছেন। কারণ তার বাড়ীও পীরগঞ্জে। তিনি আরও বলেন, কৃষককে রাস্তার পাশের জমির মাটি দিতেই হবে। অবশ্য মাটির জন্য টাকা দেয়ার ব্যাপারে কোন কথা বলেননি তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় বলেন, আমি বড় আলমপুর ইউনিয়নের ধর্মদাসপুরে রাস্তাটির এইচবিবি কাজের উদ্বোধন করতে গিয়েই প্রথমে রাস্তার পাশের জমি থেকে মাটি কাটার ছবি তুলেছি। আমি এ ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত দেখবো।
প্রকল্পটির উপ-পরিচালক (ডিপিডি) উপসচিব মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঠিকাদার যদি মাটির টাকা না দেয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকেরা পিডির কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা মাটির টাকা প্রদানের জন্য ঠিকাদারকে চাপ সৃষ্টি করতে পারবো। প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) যুগ্ম সচিব সুব্রত পাল চৌধুরী বলেন, পীরগঞ্জে জাইকা প্রকল্পের অধীনে ওই রাস্তা গুলোতে মাটি দেয়ার জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে। ঠিকাদার যদি টাকা না দেয়। তাহলে আমার সাথে কথা বলবেন।