পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রোববার সকাল থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার মধ্যদিয়ে ঢাকা থেকে দেশের সর্বদক্ষিণের পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরি যুগের অবসান ঘটেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে কুয়াকাটা থেকে ঢাকা পর্যন্ত মোট ১৪টি নদীর ওপর ফেরি ছিল। একের পর এক ফেরি পার হয়ে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত পৌঁছতে ক্ষেত্রবিশেষে ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যেতো। ঘন্টার পর ঘন্টা এসব ফেরি ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হতো। এতে করে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে এসব ফেরি ঘাটে চরম ভোগান্তিতে পরতে হতো এ্যাম্বুলেন্সবাহী রোগী ও তাদের স্বজনদের। সেই ভোগান্তির অবসান হয়েছে রোববার (২৬ জুন) থেকে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সংবাদকর্মী মেজবা উদ্দিন মাননু বলেন, এই রুটের ১৪টি ফেরি পাড়ি দিয়ে সড়ক পথে ঢাকায় পৌঁছতে হয়েছে। অনেক কষ্ট হতো ফেরি পারাপারে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ঘাটে সেতু নির্মান করা হয়েছে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো পদ্মা নদী পাড়ি দেয়া। এবার সেই চ্যালেঞ্চকে বাস্তবে রূপ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে অতীতের সীমাহীন ভোগান্তির অবসান করছেন।
বাউফলের সংবাদকর্মী কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, পদ্মার বুকে নির্মিত এটি শুধু একটি সেতুই নয়; এটি বাংলাদেশের সক্ষমতার স্মারক। দেশ-বিদেশের কতিপয় ব্যক্তির গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক স্বপ্ন জয়ের ইতিহাস। বিশ্ব দরবারে আজ আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারছি, আমরাও পারি। বাকেরগঞ্জের সংবাদকর্মী জিয়াউল হক বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে অসাধ্যকে সাধন করায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরঋণি হয়ে থাকলো। নলছিটির সংবাদকর্মী খালিদ হাসান তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের দক্ষিণাঞ্চলবাসীর আত্মবিশ্বাস আর নির্ভরতার প্রতীক। এই সেতুর সুফল সবচেয়ে বেশি ভোগ করবো আমরা দক্ষিণাঞ্চলবাসী। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এসব এলাকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এখানকার কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ব্যবসা পদ্মা সেতুর কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট কলাপাড়া উপজেলার শিববাড়িয়া নদীর ওপর ‘শেখ রাসেল সেতু’ উদ্বোধণ করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার সোনাতলা নদীর ওপর ‘শেখ জামাল সেতু’ এবং আন্ধারমানিক নদীর ওপর ‘শেখ কামাল সেতু’ উদ্বোধণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালীর লাউকাঠি নদীর ওপর ‘পটুয়াখালী সেতু’, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর পায়রা (লেবুখালী) নদীর ওপর ‘পায়রা সেতু’, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বরিশালের দপদপিয়া নদীর ওপর ‘শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু’, ২০০৩ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সুগন্ধা নদীর ওপর ‘ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’ ও একইবছর উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ওপর ‘এমএ জলিল সেতু’, ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ‘আড়িয়াল খান সেতু’, ঝালকাঠীতে ‘গাবখান সেতু’সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে অসংখ্য নান্দনিক সেতু উদ্বোধণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২৫ জুন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধণের মধ্যদিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা সড়ক পথে চিরচেনা ফেরি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা সহজতর হবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। মানুষজন বরিশাল থেকে সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কাজ শেষে আবার সন্ধ্যায় বরিশালে পৌঁছতে পারছেন। বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য দক্ষিণাঞ্চলে আসতে শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধণের পর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ তৈরির কারখানায় সুফল আসবে।
দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের একমাত্র অভিভাবকখ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ত্রী আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যন্নোয়নের জন্য কিছুই চাইতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ততোবারই এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।