বড়াইগ্রামে দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহ গণনাকাজে সঠিকভাবে গণনা না করা, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে দিয়ে দায়িত্ব পালন, প্রশিক্ষণার্থীদের খাবার ও ভেন্যূ ভাড়ার টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সমন্বয়কারী ফরহাদ হোসেন ও জোনাল অফিসার জুয়েল রানার বিরুদ্ধে। ফরহাদ হোসেন বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিসংখ্যান তদন্তকারী (তৃতীয় শ্রেণির পদ) ও জুয়েল রানা জেলা পরিসংখ্যান অফিসের পিয়ন (চতুর্থ শ্রেণির) পদে কর্মরত। উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার পদ শুন্য থাকায় ফরহাদ হোসেনকে উপজেলা সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরে তিনি অনিয়ম করে বড়াইগ্রাম সদর ইউনিয়নে চতুর্থ শ্রেণীর পদ মর্যাদার কর্মচারী জুয়েল রানাকে জোনাল অফিসারের দায়িত্ব দেন। এভাবে অদক্ষ নি¤œ শ্রেণির কর্মচারীদেরকে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় গণনা কাজ সঠিকভাবে না হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার জেলা পরিসংখ্যান বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের টিম এসব অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, যথাযথ তদারিকর অভাব এবং সুপারভাইজার, গণনাকারীদের সাথে তাদের দুজনের দুর্ব্যবহারের ফলে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন না করায় উপজেলার অনেক পরিবার এখনো গণনার বাইরে রয়ে গেছে। খলিশাডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক খাদিজা খাতুন ডলি জানান, তিনি উপজেলার বনপাড়ায় বসবাস করেন। কিন্তু তার বাসায় কোন গণনাকারী আসেননি। এতে তিনি এ শুমারির আওতাভূক্ত হতে পারেননি। শুধুমাত্র বড়াইগ্রাম সদর ইউনিয়নে এমন আরও অন্তত ১৮-২০টা অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। আবার গণনা শুরুর প্রথম রাতে ভাসমান লোকজনদের গণনার কথা থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকাংশ জোনাল অফিসারদের মাঠে পাওয়া যায়নি। সে রাতে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসের বারান্দায় চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্তত ১৫ জন ভ্রাম্যমান আম ব্যবসায়ী রাত কাটান। কিন্তু তাদেরকে গণনায় আনেননি সংশ্লিষ্ট জোনাল অফিসার। পরবর্তীতে এই প্রতিনিধিকে বিষয়টি জানান তারা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত গণনাকারী ও সুপারভাইজারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৪-১২ জুন পর্যন্ত দুই ধাপে বড়াইগ্রাম সরকারী কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে সুপারভাইজার ও গণনাকারীদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণে সরকারীভাবে বরাদ্দ থাকলেও নি¤œমানের খাবার সরবরাহ, ল্যাবের প্রজেক্টর ও প্রশিক্ষণ ভেন্যু ব্যবহার করে ভাড়া কম দেয়া, এলাকায় যথাযথভাবে পোষ্টারিং ও মাইকিং না করার অভিযোগ উঠেছে।
সুপার ভাইজার গোলাম হোসেন বলেন, প্রতিদিন একজন প্রশিক্ষণার্থীর খাবার বাবদ ২৬১ টাকা প্রজেক্টর ও ভেন্যূ ভাড়া ১৪ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু প্রশিক্ষণে অতি নিম্ম মানের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে যার মূল্য একশ টাকার বেশী হবে না।
বড়াইগ্রাম সরকারী অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের কলেজের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ব্যবহার করে সর্বসাকুল্যে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছেন। পরে শুনেছি যে, ভাড়া এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা নির্ধারিত ছিলো।
এ বিষয়ে জুয়েল রানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় ভালো হোটেল থেকে খাবার নিয়েছি। যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি আরও বলেন, আমি পিওন পদে কর্মরত থাকলেও মাষ্টার্স পাস হওয়ায় জেলা থেকে আমাকে জোনাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ফরহাদ হোসেনের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে শুরু করলে তিনি বলেন, আপনি এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার কে? এটা অফিসিয়াল বিষয়, বাইরের মানুষকে বলতে যাবো কেন? বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
জেলা পরিসংখ্যান অফিসার শাহ আলম বলেন, ফরহাদ হোসেনের সক্ষমতা কম। সেতো চাকরী করে। এখন কি করার আছে। তবে যদি গণনায় বাদ পড়ে থাকে তথ্য দেন সেগুলো আমরা যাচাই করে দেখবো। তবে গণনা চলা কালে জানালে ভালো হতো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়াম খাতুন বলেন, কিছু ভূল ত্রুটি বা গণনাকারীদের সাথে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সেভাবে কোন অনিয়মের বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।