নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র ছাত্র রাহুল দেব রায়’র ধর্মীয় উস্কানির ফেসবুক স্ট্যাটাস’র বিষয়কে কেন্দ্র করে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিতের (জুতার মালা দেয়া) ঘটনায় নড়াইল সদর থানার ওসি শওকত কবিরকে খুলনায় ক্লোজড করা হয়েছে। ঘটনার দিন অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্বায়িত্ব পালন করার পরও প্রত্যাহার হয়েছেন তিনি। রোববার (৩ জুলাই) নড়াইল জেলা পুলিশ সূত্রে বিষযটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা দেয়ার ব্যাপারে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি শনিবার (২জুলাই) রাতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এ তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী। সদস্যরা ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম ছাইয়্যেদুর রহমান ও সদর থানার ওসি শওকত কবির। মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার (৩ জুলাই) কলেজ পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাতকার নেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত দল মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নেন। তদন্ত চলাকালেই সদর থানার ওসি শওকত কবিরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা দেয়ার নেপথ্যের কারিগর হিসেবে বিভিন্ন মিডিয়ায় শিক্ষক আকতার হোসেনকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এবং ওই ঘটনা সামাল দিতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় আকতার হোসেনকেও বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হতে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত ১৮ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করা, শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম, ৩টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেয়া, পুলিশের কাজে বাঁধা ও পুলিশের উপর আক্রমণ করার বিষয় নিয়ে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুরসালিন বাদি হয়ে সোমবার (২৭ জুন) ১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলার পর ওইদিন রাতে পুলিশ ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ৪ যুবককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নড়াইল সদরের বিছালী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের মালেক মুন্সীর ছেলে বখাটে শাওন মুন্সী, মির্জাপুর গ্রামের সৈয়দ মিলন এর ছেলে সৈয়দ রিমন এবং একই গ্রামের মনিরুল শেখ। এছাড়াও ২৯ জুন রাতে খুলনা হতে মামলার অন্যতম আসামি নড়াইল সদরের বিছালী ইউনিয়নের রুখালি গ্রামের রহমত উল্লাহ বিশ্বাস রনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪জন আসামীকে তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা রোববার (৩ জুলাই) তাদের তিনদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে শিক্ষক আকতার হোসেনকে বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের হতে অব্যহতি দেয়ায় তিনি শনিবার (২ জুলাই) মির্জাপুর বাজারে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।