মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা সরন কালের বন্যায় ভাসছে। চারদিকে পানি আর পানি। সাথে বান বাসী মানুষের কষ্ট। উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক যেন পিছু ছারছেনা। বন্যায় গত ১৮ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে আছেন উপজেলার অর্ধলক্ষ মানুষ। গত ১৫ জুন থেকে পাহাড়ি ঢল, উজান থেকে নেমে আসা পানি আর অতিবৃষ্টিতে এ উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ। দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার পানির সঙ্কট। এ ছাড়া স্যানিটেশন সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলার গ্রামীণ সড়ক সহ আঞ্চলিক মহাসড়ক পানির নিচে থাকায় এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে কয়েকগুণ। এদিকে পানিতে বাড়ছে পানিবাহিত রোগবালাইও।সরকার বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেছেন আক্রান্তরা। তবে সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের জাঙ্গিরাই গ্রামের জরিনা বেগম বলেন, ১৫/১৬ দিন ধরে ঘরের ভেতরে পানি। কিন্তু খাবার পানি নেই। এ ছাড়া বাসার টয়লেটও পানিতে তলিয়ে গেছে। খাবার ও পানি সংকটে আমার পরিবার দিশেহারা। বেলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মিনারা বেগম বলেন, অর্ধ-মাস ধরে ঘরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। পানির কারণে ঘর থেকেও বের হওয়ার উপায় নেই। খাবার পানি নেই। টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই। সবমিলিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে আমাদের। কোনমতে না খেয়ে বেঁচে আছি।বন্যা আক্রান্ত জায়ফরনগর ইউনিয়নের সামছু মিয়া বলেন, 'ঘরে অনেকগুলো গরু রয়েছে। নিজেরা তবু কোনোরকমে খেতে পারছি। কিন্তু মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সমরজিৎ সিংহ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ডায়রিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত। মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসার পাশাপাশি ফ্রি ঔষধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মাসুম রেজা বলেন, ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের আগে প্রতিটি মানুষের ঘরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা করে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির উপজেলা সভাপতি ইমরুল ইসলাম বলেন, বিগত ১০০ বছরের মধ্যে এবার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে হাওর পাড়ের মানুষ দীর্ঘ স্থায়ী বন্যার কবলে পড়েছে। হাকালুকি হাওরে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে হলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বুড়িকিয়ারি বাঁধ অপসারণ করার পাশাপাশি হাওরের মধ্য দিয়ে করা রাস্তা গুলোতে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। হাকালুকি হাওর কে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মনসুর আলী বলেন, বন্যায় উপজেলার ২৮ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার্ত মানুষের জন্য ২৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৬৫ টি পরিবারের ২৪০৮ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা নিবার্হী অফিসার মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বন্যার্ত মানুষের মাঝে চাল, শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নিবার্হী অফিসার সোনিয়া সুলতানা বলেন, জুড়ীতে এ পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষের মাঝে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা উপহার স্বরূপ ১১৫ মেট্রিক টন চাল ও ১০০০ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং জি আর ক্যাশের মাধ্যমে চাল, ডাল, আলু, তেলসহ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পানি বিশুদ্ধকরন টেবলেট সরবরাহ করার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।