দেশে করোনা সংক্রমণ আবারো বাড়ছে। মাঝে কমে এলেও এখন আবারো তা মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। মৃত্যুর তালিকা বাড়ছে। শুধু বাংলাদেশের নয়, করোনা সংক্রমণের এ প্রবণতা বৈশ্বিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পূর্বÑভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। ইউরোপ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও আমেরিকায় এ প্রবণতা বেশি তবে আফ্রিকা ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কমেছে। যেসব অঞ্চলে সংক্রমণ বেড়েছে, সেসব জায়গায় মৃত্যুও বেড়েছে। মাত্র এক সপ্তাহ পরে বাংলাদেশে ঈদুল আযহা। ঈদকে সামনে রেখে পশুর হাট, বাজারঘাট, গণ-পরিবহনে জনসমাগম বাড়ছে। ফলে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়। এরপর বাংলাদেশ সহ সারা বিশে^ দু’বছরের বেশি সময় মহামারি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কখনো কমছে আবার কখনো বাড়ছে। সেই সাথে করোনার ভাইরাস পরিবর্তিত হয়ে চিকিৎসকদের বেসামাল করে তুলেছে। এবার করোনার যে ভেরিয়েন্ট আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, তা ভিন্ন ধরনের। অমিক্রনের বিএÑ৫ এ ভেরিয়েন্টটি এতটাই পৃথক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন যে এ গতি প্রকৃতি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না। বিজ্ঞানীরা। কাজেই প্রধান প্রতিশোধক এখন মাস্ক ব্যবহার ও গণ-সমাবেশ এড়িয়ে চলা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেকেই ঘরের বাইরে যাবার সময় মাস্ক ব্যবহার করছেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটিও উপেক্ষিত। গত দু’বছরে মাঝে মধ্যে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ার যে অভ্যাসটি গড়ে-উঠেছিল,তাও এখন অনেকে করছেন না। গত ২৮ জুন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ দোকান, শপিং মল, বাজার, হোটেল, রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরাসহ দুটি নির্দেশনা দিয়েছে। মাস্ক না পরলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও সতর্ক করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে কেমন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। মহামারি পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য-বিদদের নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এখন একটি ছাড়া সব কমিটিগুলো নিষ্ক্রিয়। সভা হয়েছে কেবল জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি (কোভিড ১৯) এ কমিটি গত ১৪ জুন সভা করে ছ’টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা বলেছিল। কিন্তু গত ১৮ দিন পরও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনা প্রতিরোধে দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে বলছে, বাংলাদেশ জনসংখ্যার ৭০ দশমিক ৪ শতাংশকে পূর্ণ দু’ডোজ টিকা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। এ ছাড়া বাংলাদেশ করোনার চিকিৎসার যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ- ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) অনুমোদিত ওষুধ ব্যবহার ও উৎপাদনের অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু অমিক্রনের উপধরন বিএÑ৫ এর সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা আছে এ উপধরনের। ফলে টিকা নিলেও এ উপধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও মাস্ক ব্যবহার ছাড়া আপাতত কোন প্রতিরোধ নেই।
তাই আজ সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাঁচতে হবে অমিক্রনের উপধরন বিএÑ৫ থেকে। তাই সরকারের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বিশেষ তদারকি করা। আর জনগণের উচিত নিজেদের নিরাপদ রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।