আগে ছিল খেয়াঘাট। এখন হয়েছে ফেরিঘাট। এই ফেরিঘাট চালু হওয়ায় সাতক্ষীরার দুই দ্বীপ ইউনিয়নে খুলে গেলো সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনে এ ফেরিঘাট দেখাবে আলোর পথ। এমনটি আশা করছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুর ও গাবুরার মানুষ। তারা জানান, খোলপেটুয়া নদী পারাপারে উভয় পাড়ের মানুষের ছিল চরম দুর্ভোগ। বিপদে-আপদে রাতে খেয়াঘাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো। সময় মতো খেয়া না পেয়ে খেয়াঘাটেই বসে থাকতে হতো। অনেক প্রসূতি মায়ের সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে এই খেয়াঘাটেই। খোলপেটুয়া নদীতে পড়ে অনেকেই হয়েছেন আহত। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। মানুষের সেই কষ্টের দিন শেষ। এখন সেখানে এসেছে ফেরি। এখন থেকে মানুষ এপার-ওপার যাতায়াত করতে পারবেন ফেরিতে। গত রোববার খোলপেটুয়া নদীর ফেরি উদ্বোধন করার পর সোমবার সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেছে আনন্দের সাথে। স্থানীয় আবদুল হালিম, রাকিবুল ইসলাম, বেলাল হোসেনসহ অনেকেই বলেন, স্বপ্নের নওয়াবেঁকী ফেরিঘাট চালু হওয়ায় খুলে গেলো দুই দ্বীপ ইউনিয়নের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। যে জনপদে কখনো যায়নি বাস-ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। সেই জনপদে এখন থেকে চলবে এসব আধুনিক যানবাহন। এতে মানুষের জীবন-যাত্রায় আসবে পরিবর্তন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই ফেরিঘাট দেখাবে আলোর পথ। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারে খুলে যাবে অবারিত দুয়ার।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুর ও গাবুরায় সড়ক যোগাযোগের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত নওয়াবেঁকী-পাখিমারা ঘাটে ফেরি উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার। এরই সাথে উপকূলীয় কয়েক লক্ষ মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলো।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্যামনগর উপজেলার
নওয়াবেকী-পাখিমারা ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালুর ফলে উপকূলীয় পদ্মপুকুর, গাবুরা, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরসহ পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নওয়াবেঁকী ফেরিঘাটের একপাড় হতে অন্যপাড়ে পারাপারের টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগের অধীন এ ফেরিঘাটের টোল ট্রেইলার একশত পঁচিশ টাকা, হেভি ট্রাক একশ' টাকা, মিডিয়াম ট্রাক পঞ্চাশ টাকা, বড় বাস পয়তাল্লিশ টাকা, মিনি ট্রাক চল্লিশ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যান ত্রিশ টাকা, মিনিবাস কোষ্টার পঁচিশ টাকা, মাইক্রোবাস কুড়ি টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন কুড়ি টাকা, সিডান কার পনেরো টাকা, চার চাকার মোটরাইজড যান পাঁচ টাকা, মোটরসাইকেল পাঁচ টাকা এবং রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি পাঁচ টাকা।
তিনি আরও বলেন, শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর দুই তীরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও দ্রুততর করতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নওয়াবেকী-পাখিমারা ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন বলেন, খেয়াঘাটে বসে নৌকার অপেক্ষায় মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে ছিলেন। সেই দুর্ভোগ আর নেই। দুই দ্বীপ ইউনিয়নে এ ফেরিঘাট সূচনা করেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার বলেন, শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নে কখনো যাত্রীবাহী বাস কিংবা পণ্যবাহী ট্রাক যায়নি। নৌকায় নদী পার হয়ে মানুষ যাতায়াত করেছে। সীমাহীন কষ্ট পেয়ে আসছিল তারা। ফেরি চালুর ফলে দুই দ্বীপ ইউনিয়নসহ এলাকায় উন্নয়নের নতুন মাত্রা যোগ হলো। মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্মোচন হলো স্বপ্নের দুয়ার।
এদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলের রোগী বহনসহ সকল সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রেখে ফেরিটি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।