পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের লাইফ লাইন হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পলিথিন। এ বন্দরের স্থাপনাগুলো নির্মিত হয়েছে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে। আর এ নদীর তলদেশে ২ থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত পুরু হয়ে জমেছে পলিথিনের স্তর। ফলে নাব্য সংকটে পড়ছে কর্ণফুলী। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জাহাজ চলাচল। এ পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বন্দর রক্ষায় কর্ণফুলীর গভীরতা বাড়াতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও পলিথিনের কারণে এ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেজার আটকে যাচ্ছে পলিথিনের পুরু স্তরে। চীন থেকে আনা অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিনেও কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। কারণ, দেশের বেশিরভাগ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে এ বন্দর দিয়েই। কাজেই যেভাবেই হোক, কর্ণফুলীর তলদেশ থেকে পলিথিন অপসারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে যেসব খাল দিয়ে কর্ণফুলীতে পলিথিন পড়ছে, সেসবের ব্যাপারেও নিতে হবে ব্যবস্থা। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পলিথিনের ব্যবহার। দেশে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এর কোনো কার্যকারিতা লক্ষ করা যায় না। ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে পলিথিন ব্যাগের কারখানা। অবাধে ব্যবহার হচ্ছে এ ব্যাগ। এক জরিপ অনুযায়ী, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি। একটি পলিথিন একশ বছরেও পচে না। এ সময়ে এটি মাটির যেখানেই থাকে, সেখানেই ক্ষতি করে। এটি নদীর তলদেশে জমা হয়ে যেমন নাব্য সংকট সৃষ্টি করে, তেমনি মাটিতে থেকে যাওয়ায় জমির উর্বরতা হ্রাস করে ফসলের ফলন কমিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে মাছের পেটেও পলিথিন পাওয়া গেছে। সাগর থেকে আহৃত লবণেও প্লাস্টিক দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পলিথিন পোড়ালে বায়ু দূষিত করে। সব মিলে পলিথিন একটি ভয়াবহ ক্ষতিকর বস্তু। তাই সারা বিশ্বে পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে এ ব্যাপারে আইনের কোনো প্রয়োগ নেই, এটি দুর্ভাগ্যজনক। দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্রমেই ভয়াবহ সংকটের দিকে যাচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের তালিকায় বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের অনেক কারণ থাকলেও পলিথিন তথা প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এজন্য অন্যতম দায়ী। এ অবস্থায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করে এর বিকল্প হিসাবে পচনশীল দ্রব্যের প্রচলন করা উচিত জরুরি ভিত্তিতে। দেশে পাটের আঁশ থেকে ‘সোনালি ব্যাগ’ তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি এখনো রয়েছে পাইলট পর্যায়ে। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, পচনশীল ও কম্পোস্টেবল এ ব্যাগ ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা জরুরি। জানা গেছে, এজন্য উৎপাদন পদ্ধতির আরও উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে গতিসম্পন্ন মেশিন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে আসবে, এটাই কাম্য। সোনালি ব্যাগকে যত দ্রত পলিথিন ব্যাগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা যায়, ততই মঙ্গল।