ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে চাদপাড়া গ্রামের মৃত সুলতান আলীর ছেলে মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন বাবলু (৩৮) নামের একজন আমেরিকা প্রবাসী গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এক গরুর খামার। সিএসবি এগ্রো লিমিটেড নামের এই গরুর খামারটি উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিসের গবাদি পশু পালনের রেজিস্ট্রেশনকৃত একটি আধুনিক খামার।
বাবলু মাস্টার্স পাশ করে ২০১০ সালে আমেরিকায় পাড়ি দেন।জীবন জীবিকার তাগিদে প্রবাস জীবন কাটালেও মন তার পড়ে থাকে শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত নিজ গ্রামে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গ্রাম, সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শুরুটা হয় ২০১৮ সালে একটি গাভী গরু ক্রয়ের মাধ্যমে।এরপর ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৩০ টি গরু ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি শেড তৈরি করে সেখানে গরু তোলেন। বের্তমানে তার খামারে ৩টি শেডে ছোট-বড় ৭০ টি গরু রয়েছে।এর মধ্যে ষাড় গরু আছে ৫০ টি এবং গাভী গরু আছে ২০ টি।এ বছর কোরবানির জন্য তিনি তার খামারে পালিত ৪৫ টি গরু রেডি করেছেন।ইতিমধ্যে বেশ কিছু গরু বিক্রিও করেছেন।এই খামারের প্রতিটি গরুকে আধুনিক পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত সুষম খাবার খাওয়ানো হয়।গরু গুলোর খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিচুলি কুচি,ফার্মের পাশে লাগানো তরতাজা সবুজ ঘাস।এছাড়াও ভুট্টা, ভুট্টা গাছ চিটা গুড়া, ইউরিয়া, খাবার শুডা ও বিট লবণ এর সমন্বয়ে মিশ্রিত ফর্মাটেড কর্ণ।এই ফর্মাটেড কর্ণ ২৫ থেকে ২৭ দিন ড্রামের মুখ আটকে সংরক্ষণের পর গররি খাবার উপযোগী হয়। এছাড়াও ফার্মের গরুগুলোর নিয়মিত খাদ্য তালকায় রয়েছে কলা গাছের সাইলেজ ও পটেটো সাইলেজ।খামারটিতে প্রতিনিয়ত গরুগুলোর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত দিকটি পর্যবেক্ষণ করেন একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তার। এই গ্রামেরই ২০ জন লোক গরুর এই খামারে কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। খামারটির উৎপাদিত দুধ সিএসবি দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয় রমজানে গ্রামের নির্বাচিত ৩০ টি দরিদ্র পরিবারকে মাসব্যাপী নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ ফ্রী দেওয়া হয়।এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এই খামারে কাজ করেন সোহান,ইমন,রাসেল,রাজু ও বক্তারের সাথে কথা হলে তারা জানায়,একজন প্রবাসী হয়েও ভাই গ্রামে যে গরুর খামারটি গড়ে তুলেছেন তা অন্য যে কোনো খামার থেকে ব্যাতিক্রম। তিনি আমেরিকা থেকে খামারটি পরিচালনা করন। সেখানকার খামারে যেভাবে গরু পালন করা হয় তিনি তার খামারেও সে পদ্ধতি ব্যবহার করার ব্যাপারে সর্বক্ষণিক পরামর্শ দেন আমাদেরকে। সবচেয়ে বড় কথা এই খামারে কাজ করে আমাদের সংসার চলছে। সিএসবি এগ্রো লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারী বোরহান উদ্দিন বাবলু জানান,গরুর খামার একটি লাভজনক ব্যাবসা।
বাংলাদেশে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ আমাদের মাংসের চাহিদা প্রচুর, উৎপাদন কম। এ ছাড়া গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের সাথে কর্মসংস্থান, গোবর উৎপাদন, চামড়া উৎপাদন, পরিবেশ উন্নয়ন এসব নানা কিছু জড়িত। একটি কথা তো সর্বজন স্বীকৃত যে প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় এদেশে প্রায় ৪০-৫০ লাখ গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া কোরবানি করতে হয়। এ সংখ্যার ৭০% গরু। সুতরাং কোরবানি উপলক্ষে সংখ্যাগরিষ্ট সংখ্যক গবাদিপশু মোটাতাজা করতে হয়।আমি মনে করি কাজটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ এ দেশের উল্লেখযোগ্য মানুষের নিয়মিত কর্মসংস্থান। যা থেকে বছরব্যাপী আমাদের মাংস সরবরাহ নিশ্চিত হয়।ব্যক্তি উদ্যোগে আমি এই খামারটি গড়ে তুললেও স্থানীয় প্রানীসম্পদ অফিসের কোনো সহযোগিতা আমি পাইনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মামুন খান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন,রাখালগাছির এই গরুর খামারের কথা আমি শুনেছি।আমাদের অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।