ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বন্ধ থাকায় বাড়িতে শিক্ষক কর্মকতা ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় ক্যাম্পাস শূণ্য থাকলেও সচল চোর চক্র। এজন্য আবাসিক কোয়াটার,হল বিভিন্নস্থানে বেড়েছে চোরের উপদ্রব। কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োগ করা কর্মীদের চোখে ধুলো দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল, অ্যাকাডেমিক ভবন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংরক্ষিত এলাকায় একের পর এক ঘটছে চুরির ঘটনা বারবার বারছে। সেসব সময় চোর ধরা পরলেও এ ঘটনায় বয়স ছোটসহ বিভিন্ন তদবির ও কারণ দেখিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। চোরদের অনেকেই কিশোর ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে ক্যাম্পাসে বারবার চুরির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের মাঝে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন তারা। তাদের দাবি, কয়েকদিন পর পর ক্যাম্পাসে চুরির খবর শুনতে হচ্ছে। অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও তাদের সনাক্ত করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যমুনা আবাসিক ভবনে একটি চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। গত ৬ জুলাই বিষয়টি জানাজানি হয়। ভবনের নীচতলায় বেলকুনির গ্রিল কেটে ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে চোর কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর ওই কক্ষ থেকে ২০-২৫ হাজার নগদ টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৩ জুলাই ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চোর সন্দেহে দুই কিশোরকে আটক করা হয়। পরে তাদের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থানায় সোপর্দ করা হয়। তাদের নামে মামলা হওয়ার আগে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত হয়। এ সময় তাদের উপস্থিতিতে আটককৃত ওই দুইজনের বয়স কমের অজুহাতে মামলা না দিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়া পাওয়া ওই দুজন আবাসিক ভবনে চুরি করেছেন বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
এদিকে একই ঘটনা ঘটেছিল ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চুরি করতে এসে ধরা পড়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হয়। এ সময় সে দুই লাখ টাকার সমপরিমাণ জিনিস চুরির স্বীকারোক্তি ও তার সহযোগী গ্যাংদের তথ্য দেয়। তবে চুরির দায় স্বীকার করলেও স্থানীয়দের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টির শঙ্কা ও অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানায় সূত্র। এ ছাড়া ওই গ্যাংদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে জানা গেছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৬ জুন দুই দফায় দেশরতœ শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ৮ জুন কেন্দ্রীয় মসজিদের কাচ ভেঙে চারটি বড় স্ট্যান্ড ফ্যান এবং ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বঙ্গবন্ধু হল থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা মূল্যের সিঁড়ির ১০টি পাতি চুরির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের সামনে দোকানে ও ক্রিকেট মাঠ থেকে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের খেলার সামগ্রীসহ লাইট সেট চুরি হয়। এর আগে করোনাকালীন বন্ধে বিভিন্ন আবাসিক হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনে ১০টিরও বেশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। খালেদা জিয়া হলের পুরাতন ব্লকের নয়টি কক্ষে, সাদ্দাম হোসেন হলে, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের চার কক্ষে, শেখ রাসেল হলের লাখ টাকার সাবমার্সিবল পাম্প ও রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের পাশ থেকে দুই ভ্যান টাইলস ও আট কার্টন ক্যাবলসহ নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবন থেকে জিনিসপত্র চুরি হয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংলগ্ন এলাকায় এক ছাত্রীর মোবাইল ও ক্যাম্পাসে এক সত্তরোর্ধ বৃদ্ধের ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনার কোনোটিরই সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল, পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। অসংখ্য চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও কর্তৃপক্ষের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। গুপ্ত কোন চোর চক্র এ কাজ করছে বলে ধারণা, কারণ এমন আবাসিক এলাকায় বাহিরের কেউ হটাৎ করে আসতে পারনা।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ক্যাম্পাসের সর্বত্র লাইটিং এবং সিটিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করাসহ নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।