দেশের চামড়াশিল্পে বছরে যে পরিমাণ চামড়ার প্রয়োজন হয় তার প্রায় অর্ধেক সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে। পশু কোরবানির পর সারা দেশ থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া রাজধানীর পোস্তগোলাসহ বিভিন্ন আড়তে সংরক্ষণ করা হয়। দু-এক দিন পর ট্যানারি মালিকরা এসব চামড়া কিনে নিজস্ব ট্যানারিতে সংরক্ষণ করেন। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে সুবিধামতো তা পাকা করা হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় বাড়িয়েছে সরকার। এবার লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। কোরবানির পশুর চামড়ার ক্রয়মূল্য নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এজন্য ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক প্রয়োজনীয় টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। দেশে প্রয়োজনীয় লবণ মজুদ আছে। লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক আছে। দেশি গরু-ছাগলেই কোরবানির মৌসুমের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা বাংলাদেশের তৈরি হয়েছে। সরকার কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, গত বছরের চেয়ে এ বছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেশি পশু কোরবানি হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৯৭ লাখ। এক কোটি ২১ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয় তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যাঁরা দেন, তাঁদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চলতি বছর কোরবানির পশুর লবণজাত চামড়া সংগ্রহ করা হবে। চামড়া লবণ দিয়ে সাত দিন স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এরপর রাজধানীতে আসবে। এতে চামড়ার নষ্ট হওয়া ঠেকানো এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা যাবে। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১.২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এত পরিমাণে চামড়া সরবরাহ থাকলেও দেশে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। আমাদের চামড়াশিল্প বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে। এই শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। চামড়া জাতীয় সম্পদ, শিল্পের কাঁচামাল যাতে পাচার হয়ে না যায়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। পশুর চামড়া যথাযথ পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।