ঈদ-উল আযহার নামাজ শেষ হওয়ার পর নগরীসহ জেলার সর্বত্র শুরু হয় পশু কোরবানি। আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ধর্মপ্রান মুসলমানরা দিনটি পালন করলেও খুশি নেই মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মনে। আড়তদাররা বাকিতে চামড়া নেয়ায় তারা চরম বিপাকে পরেছেন।
জানা গেছে, গত ১০ জুলাই সকালের পর থেকেই মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লা থেকে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে নামেন। তাদের কাছ থেকে দুপুরের পর থেকে চামড়া নিতে শুরু করেন স্থানীয় আড়তদাররা। এরমধ্যে কেউ কেউ নগদ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ আড়তদাররা বাকিতে চামড়া নিয়েছেন। তবে যারা আবার নগদ টাকার বিনিময়ে চামড়া নিয়েছেন, তাদের দেয়া মূল্যে খুশি নন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে পচে নস্ট হওয়ার ভয়ে ব্যবসায়ীরা কাঙ্খিত মূল্যের চেয়েও কম দামে বাকিতে চামড়া বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি স্থানীয়ভাবে ৪০টি চামড়া সংগ্রহ করেছেন। গাড়ি ভাড়া করে এসব চামড়া তিনি নিয়ে আসেন নগরীর পদ্মাবতী এলাকার আড়তদারদের কাছে। কিন্তু সেখানে চামড়ার যে দাম ধার্য করা হয়েছে, তা শুনে তিনি হতাশ হয়ে পরেছেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, আড়তদাররা মাঝারি গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছেন ৩৮০ টাকা। গাড়ি ভাড়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে কেনা এসব চামড়া এ দামে বিক্রি করায় তার ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। পদ্মাবতী এলাকার স্থানীয় আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, নগরীকে যেকজন ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন, তাদের মধ্যে আমিই নগদ পুঁজি খাটিয়েছি। সাইজ অনুযায়ী চার থেকে পাঁচশ’ টাকায় চামড়া ক্রয় করেছি। মিজানুর রহমানের বাবা ষাটোর্ধ আবদুল মজিদ মিয়া বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনও আমাদের ৫০ লাখ টাকা আটকে আছে। সে অর্থ আদায় না করা পর্যন্ত নতুন করে বিনিয়োগ করাটা বড় ঝুঁকি। তাই যে টাকায় চামড়া কিনেছি, তা স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করে ঢাকায় পাঠালে আদৌ খরচ উঠবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
বাকিতে চামড়া নেয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, চারশ’ টাকা দিয়ে কেনা একটি চামড়া লবন ও শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে সংরক্ষণে আরও আড়াইশ’ টাকা খরচ হয়। ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠানোর আগেই খরচ হয়ে যায় ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া পরিবহন খরচ দিয়ে চামড়ার দাম ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠিয়ে এ মূল্য পাব কিনা, তাতেও সন্দেহ আছে। যে কারণে কিছু নগদ ও কিছু বাকিতে চামড়া সংগ্রহ করেছি।
পোর্ট রোডের চামড়ার আড়তদার বাচ্চু মিয়া বলেন, আমাদের দেশের চামড়ার মান খুবই ভালো। কিন্তু তারপরেও ট্যানারি মালিকরা চামড়ার ন্যায্য মূল্য দিতে চায় না। আমি আড়াইশ’ থেকে সর্বোচ্চ ১২শ’ টাকায় চামড়া কিনেছি। তবে গোটা টাকাই বাকি রেখেছি। কারণ বকেয়া টাকাতো পেলাম না। তার ওপর নতুন করে লবন ও শ্রমিক খরচ দিয়ে নগদ টাকায় চামড়া কেনা সম্ভব নয়।
ছাগলের চামড়া নিয়ে বিপাকে ॥ গরুর চামড়া বাকিতে নেয়া হলেও কোরবানি দেওয়া ছাগলের চামড়া ছুঁয়েও দেখছেন না আড়তদাররা। এতে কঠিন বিপাকে পরেছেন মৌসুমি চামড়া বিক্রেতারা। কারণ হিসেবে আড়তদাররা জানিয়েছেন, আকারে ছোট হওয়া ও সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে চামড়া প্রতি খরচ বেশি হওয়ায় ছাগলের চামড়ায় তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
নগরের পদ্মাবতী এলাকার আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, ট্যানারি মালিকদের আচরণের কারণেই গত কয়েকবছর ধরে ছাগলের চামড়া স্থানীয়ভাবে কেউ নিচ্ছেন না। ট্যানারি মালিকরা নিলে ও ন্যায্য মূল্য দিলে আমাদের সংগ্রহ করতে সমস্যা নেই। তিনি আরও জানান, অনেকেই ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু আমরা রাখিনি। তাই কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া ফেলে গেছেন।