সামাজিক কর্মকান্ডের আড়ালে মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের উপজেলা শাখার নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে তারা সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে অসহায় মানুষদের সহযোগিতার আড়ালে গোটা উপজেলায় গড়ে তুলেছেন দক্ষ কর্মীবাহিনী।
এমনই একটি সংগঠনের খোঁজ মিলেছে জেলার উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নে। ‘শাপলা সংগঠন’ নামের ওই সামাজিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে পরিচালনা করে আসছেন স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। যারা একসময় গোটা উপজেলাবাসীর কাছে আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা-সংস্কৃতি, দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের অঙ্গিকার এমন শ্লোগান নিয়ে উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের হস্তিশুন্ড ঈদগাহ্ মার্কেট এলাকায় গত বছরের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে শাপলা সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়।
ওই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন উপজেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক বামরাইল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী কবির হাসান মৃধা। তিনি ছাড়াও ওই সংগঠনের সাথে বামরাইল ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক রোকন মোঃ বদর মোল্লা, হাবিবুল্লা বালী, বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ জগলু, যুবদলের সাবেক সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন, উপজেলা শ্রমিকদলের সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক মনির সরদার ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক একাধিক নাশকতা মামলার আসামি সাইদুল ইসলাম বেপারীসহ আরও বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা জড়িত রয়েছেন।
সূত্রমতে, বিএনপি নেতা কবির মৃধা এলাকার চিহ্নিত বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শাপলা সংগঠনের আড়ালে বিএনপিকে মাঠে সক্রিয় করছেন। সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছতে ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ভোলপাল্টে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত করছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই সংগঠনের ব্যানারে গত রমজান মাসে বিভিন্নস্থানে ইফতার মাহফিল, ঈদ উপহার বিতরণ, অসহায় মানুষের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, ঈদের পর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সূত্রগুলো জানিয়েছেন, বিএনপি ও জামায়াতের ওইসব নেতারা নিজেদের সংগঠিত করতে বিকল্প পন্থা হিসেবে তাদের পরিচালিত শাপলা সংগঠনে নিরাপদে বৈঠক করে যাচ্ছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা বলেন, শাপলা সংগঠনের নামে বিএনপি ও জামায়াতের ওইসব নেতারা ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে এলাকায় নিজেদের প্রভাব বলয় তৈরি করছেন। তারা কৌশল হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমর্থনেও কথা বলছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে ওইসব বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দরা রাজনৈতিক ব্যানারে মাঠে নামতে না পারলেও এবার তারা সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে নিজেদের সক্রিয় রেখেছেন।
তারা আরও বলেন, সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করেই স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়া এবং দলীয় কতিপয় সুবিধাবাদী নেতার হাত ধরে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। জামায়াত ও বিএনপির ওইসব অনুসারীরা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনে প্রবেশের মাধ্যমে এখন নিজ দলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে জামায়াত ও বিএনপির ওইসব অনুপ্রবেশকারীরা নিজেদের সংগঠিত করছেন।
শাপলা সংগঠনের সভাপতি কবির হোসেন মৃধা বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুনুর রশীদ তালুকদার বলেন, কবির মৃধা ছাড়া আর কেউ বিএনপি কিংবা জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, শাপলা সংগঠনের আড়ালে একটি বিশেষ মহলের গভীর পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের ভিত্তিত্বে ইতোমধ্যে ওই সংগঠনের কর্মকান্ডসহ পরিকল্পনার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে আমাদের একটি টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।