ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে হাওড়, বাঁওড় ও বিলসহ বিভিন্ন জলাশায়ে মাছ চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়ানিক সার। অতীতের চেয়ে মাছ চাষে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বর্তমানে বেড়েছে। জেলা মৎস্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, ছয় উপজেলায় ২৮টি বদ্ধ জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৪টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪ টি, মহেশপুর উপজেলায় ৮ টি, হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ৭ টি ও শৈলকুপা উপজেলায় ১ বাঁওড় রয়েছে। এই ২৮টি জলাশয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। যার আয়তন চার হাজার ২৯০ একর।
বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ চাষে ইউরিয়া, টিএসপিসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হিলডল জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ জলাশয়ে মাছ মরে ভেসে ওঠার জন্য ব্যবহার করা হলেও মারা যাচ্ছে অন্যান্য ছোট মাছ এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রানীও। এ ছাড়া সামগ্রীক ভাবে বর্ষাকালে অতিমাত্রায় কীটনাশক দেওয়ায় মাছের বংশ বিস্তারে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
সাগান্না, করাতিপাড়া, ভদ্রকালি দোহা ও কালিতলা দোহা বাঁওড়। কালীগঞ্জ উপজেলায় সর্জাদ, মর্জাদ, সাঁকো, বারফা বাঁওড়। কোটচাঁদপুর উপজেলায় জয়দিয়া, বলুহর, কুশনা, জগদীশপুর বাঁওড়। মহেশপুর উপজেলায় কাঠগড়া, ফতেপুর, নস্তি, স্বস্তা, পোড়াপাড়, সলেমানপুর, বাঘাডাঙ্গা ও চাপাতলা বাঁওড়। হরিণাকুন্ডু উপজেলায় নারায়নকান্দি-কায়েতপাড়া, কাপাসাটিয়া, চাদঁপুর (বদ্ধ জলাশয়), ভূইয়াপাড়া-সনাতনপুর (বদ্ধ জলাশয়), ভেড়াখালী-ভাতুড়িয়া (বদ্ধ জলাশয়), নিত্যনন্দপুর, কেচমত ঘোড়াগাছা (জলাশয়) বাঁওড়। শৈলকুপা উপজেলায় একটি মাত্র নিত্যানন্দপুর বাওর রয়েছে। এসব জলাশয়ে মাছ চাষের জন্য রয়েছে ৫৯টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সমবায় কর্মকর্তা যাচাই-বাচাই করে যাদের নামে সনদ দেন, তাদের জেলা প্রশাসন জলাশয়ে লিজের অনুমতি দিয়ে থাকে। এবং প্রকৃত সমিতিকে লিজ দেওয়া হয়। জলাশয়ের ২০ একর জমির কম হলে লিজ দেয় ইউএনও অফিস। আর ২০ একর জমির চেয়ে বেশি জমির জলাশয় লিজ দিতে পারে ডিসি অফিস। এ ছাড়া যাচাই-বাচাই করে প্রকৃত সমিতিকে জলাশয় গুলো লিজ দেওয়া হয়।
জেলায় সরকারি হ্যাচারির সংখ্যা তিনটি ও বেসরকারি হ্যাচারির সংখ্যা একটি। মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১১ হাজার ৯৪০ জন এবং মৎস্য চাষির সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৪৫। জেলায় মাছের চাহিদা ৪০ হাজার ৮৪ টন। আর উৎপাদন হয় ৪৭ হাজার ২২৩ টন। মাছের উদ্বৃত্ত থাকে সাত হাজর ১৩৯ টন। মাছের খাদ্য হিসেবে ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে ফাইবার মান নেমে যায়।
জেলা মৎস কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দীন শেখ বলেন, আমরা ইউরিয়া ও টিএসপি সার মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি। এটা দিয়ে ফাইটো প্লাংটন ও জুয়ো প্লাংটন তৈরি হয়। এতে ফাইবারের মান কমে না এবং মানবদেহের কোনো ক্ষতিও হয় না। বরং এগুলো মাছের প্রাকৃতিক খাবার। ছয়টি উপজেলার জলাশয় থেকে বছরে ৫৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হয়।