টাঙ্গাইলে বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য বসে থাকা অবসর সময়ে মোবাইল ফোনে সময় পার করার চেয়ে বই পড়ে সময় কাটানোর জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সুধীজনেরা। এ উপলক্ষে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার যাত্রীদের জন্য অণু-পাঠাগার খুলেছেন।
টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার। পরবর্তী বাস ১ ঘণ্টা পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। তাই এসময়টা তাকে অপেক্ষা করতে হবে বাস কাউন্টারে। এই সময়টা মোবাইল ফোনে অথবা অন্যকোনভাবে নষ্ট না করে যদি বই পড়ে কাটানো যায় তাহলে কেমন হয়? অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বই পড়ার এমন সুবর্ণ সুযোগ করে দিতে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার এর উদ্যোগে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে ঢাকাগামী কয়েকটি বাস কাউন্টারে অণু-পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। বাসের জন্য অপেক্ষা করে এখন আর যাত্রীদের সময় নষ্ট হবেনা বরং বই পড়েই কেটে যাবে মূল্যবান সময়। এ উদ্যোগে খুশি হয়েছেন বাস যাত্রীরা।
সড়েজমিনে টাঙ্গাইল নতুন বাস স্ট্যান্ডের সকাল-সন্ধ্যা বাসকাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে সাটানো ছোট বুকসেলফে বিভিন্ন ধরণের ২০-২৫ টি বই রাখা আছে। যেখান থেকে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা তাদের পছন্দমত বই নিয়ে পড়ে সময় কাটাচ্ছেন এবং চলে যাওয়ার সময় বুকসেলফে বই রেখে যাচ্ছেন।
এসময় অপেক্ষমাণ যাত্রী মাহফুজা আক্তার বলেন, অপেক্ষার এই সময়টা খুবই বিরক্তিকর। বই পড়ার সুযোগ পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। এভাবে মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি হবে এবং সুন্দরভাবে সময় কাটবে। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ।
কথা হয় অপেক্ষমাণ আরেক যাত্রী খন্দকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, চাকুরির সুবাধে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় প্রায়ই যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় বাসের জন্য অপেক্ষ করি। এসময়টা বই পড়ার ব্যবস্থা একটা চমৎকার উদ্যোগ। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বই পড়ার বিকল্প নেই।
অপেক্ষমাণ যাত্রী মারুফ জানান, অনেকক্ষণ বসে থাকলেও এখন আর বিরক্ত লাগেনা। এ সময়টুকু বই পড়তে পারছি।
সকাল-সন্ধ্যা বাস কাউন্টারের ম্যানেজার নিলিম জানান, বাস কাউন্টারে যাত্রীরা বই দেখে অবাক হয়ে যান। আমারও উপকৃত হচ্ছি, যাত্রীরা অযথা খোশগল্প না করে বই পড়ে। আমিও সুযোগ পেলে এখানে বই পড়ি। এ উদ্যোগের জন্য বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারকে অনেক ধন্যবাদ।
সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শামছুল হুদা বলেন, বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের এ উদ্যোগ দারুণ। মানুষ হাতের কাছে বই পাচ্ছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত হবে।
জানা যায়, সদর উপজেলার চৌরাকররা গ্রামে ২০১০ সালে মোঃ কামরুজ্জামান সোহাগ নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার। বর্তমানে পাঠাগারের সদস্য আর বইয়ের সংখ্যা দুটোই হাজার ছাড়িয়েছে। টিনের চৌচালা একটি ঘরজুড়ে এখন পাঠাগার। ঘরের ভেতর কয়েকটি তাকে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। গল্প, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস থেকে শুরু করে চাকুরির প্রস্তুতিমূলক বইÑসবই আছে সেখানে। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে। এ সময়ের মধ্যেই চলে বই দেওয়া-নেওয়া।
পড়াশোনার পর্ব শেষ করে কামরুজ্জামান এখন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। চাকরির পাশাপাশি এলাকার সমমনা তরুণদের নিয়ে বই পড়ার এ কার্যক্রম দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
মোঃ কামরুজ্জামান জানান, যাতায়াতের পথে বাসের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় মানুষ গল্পগুজব করে অলস সময় পার করে দেন। তখনই বাস স্ট্যান্ডে বই রাখার ভাবনা মাথায় আসে। এ কার্যক্রম আরো সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি বাজারে সেলুন অণু-পাঠাগার চালু করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।