নীলফামারীর সৈয়দপুরে যৌতুকের কারণে দুই সন্তানের জননীকে মেরে রক্তাক্ত করেছে তার স্বামী রাজু। এতে সহযোগিতা করে শ্বশুর আবদুল ওয়াহাব,শ্বাশুরী আঞ্জুয়ারা বেগম এবং ননদের স্বামী বেলাল হোসেন। এটি ঘটেছে ১৩ জুলাই বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ডাক্তার পাড়ায়।
নির্যাতনের শিকার স্ত্রী মকসুদা ওরফে কমলা জানায়,২০১২ সালে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয় বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ডাক্তার পাড়ার ওয়াহাবের ছেলে রাজুর সাথে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে আমার অসহায় বাবা দুই লাখ টাকা তাকে দেয়। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস না যেতেই সে আবার আমাকে যৌতুকের জন্য তিন লাখ টাকার চাপ দেয়। আমি তার কথায় রাজী না হলে সে প্রায়ই সময় আমার প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালায়। শরীরের এমন স্থানে আমাকে মারে যা আমি লজ্জায় কাউকে বলতে ও দেখাতে পারি না। এভাবে তার নির্যাতন সহ্য করে আমি সংসারে পড়ে থাকি। ওই কথা না পারি সইতে না পারি কাউকে কইতে। এরইমধ্যে কেটে যায় কয়েক বছর। এরইমধ্যে আমার কোলে আসে ফুটফুটে দুটি পুত্র সন্তান। আমার বড় ছেলে রাফিক বয়স ৯ বছর ও ছোট ছেলে রাসিক বয়স আড়াই বছর। তাদের মুখের প্রতি দেখে আমি শত নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর কাছে পড়ে থাকি। কিন্তু এবার তারা সবাই মিলে আমাকে মেরে ফেলতে চায়। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ঈদের তিন দিন পুর্ব থেকে আমার ওপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। বাড়ীর বাইরে বের হতে দেয় না আমাকে। যদি আমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন কেউ দেখে ফেলে বা আমি কাউকে বলে দেই। এ ভয়ে তারা আমাকে ঘরের মধ্যে বেঁধে রাখে। এক পর্যায় কৌশলে আমি বিষয়টি আমার বাবার বাড়ীতে জানাই। তারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুনকে বিষয়টি জানালে তিনি এসে আমাকে বুঝিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে নিজেই মীমাংসা করে দেন। আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে তা সাসিয়ে দেন পরিবারকে।
তিনি মীমাংসা করে দিয়ে চলে যাওয়ার পরই আমার ওপর শুরু হয় মারডাং। এবার নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ১৩ জুলাই পরিবারের সবাই মিলে আমার ওপর নির্যাতন চালায়। আমার স্বামী আমার গলায় মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ধারালো ছোরা লাগিয়ে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় আমি পড়ে থাকি। এলাকার লোকজন ভয়ে তাদের বাড়ীতে আসে না।
৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড মহিলা মেম্বার রুমানা,৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মহির উদ্দিন ও ১,২,৩ নং ওয়ার্ড মহিলা মেম্বারের স্বামী আনোয়ার হোসেন এসে আমাকে উদ্ধার করে। পরে আমার বাবার বাড়ীর লোকজন সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্তমানে আমি সেখানে চিকিৎসাধীন।
আমি এ অবস্থায় সন্তান নিয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকলেও তারা কেউ কোন খবর নিতে আসেনি। বরং উল্টো ভয়ভীতি দেখাচ্ছে আমাকে। মামলা করলে মেরে ফেলবে এমন কথাও বলছে। তারা খুবই দুর্দান্ত প্রকৃতির লোক। এমন কোন কাজ নেই তারা করতে পারে না। তাই আমি নিরাপত্তা হীনতা মনে করছি।