১৯৯৫ সালে তিস্তা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে মোঃ সেলিম মিয়া কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরে। তখন হতে তিনি ভাড়া বাসায় থেকে জীবিকার তাগিদে শুরু করেন সুন্দরগঞ্জ থানায় আসা-যাওয়া মানুষের আরজি লেখা। তিনি আরজি লেখতে দেখেন দেশে প্রায় ৮৫ ভাগ মামলা ভূমি কেন্দ্রিক। ভূমি বিরোধে মাসে ১৬/১৭ জনের উর্দ্ধে খুন হচ্ছে। খুনের বিচারও হচ্ছে। কিন্তু বিরোধীয় জমির ফয়সালা হচ্ছেনা সহনীয় সময়ে। অনেক ভূমি মালিক দীর্ঘদিন মামলা চালাতে নিঃস্ব-দিনমজুর হচ্ছেন। ছিন্ন হচ্ছে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন। ভূমি মামলা চাপে অন্যান্য মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না সহসায়। দেশে দেখা দিয়েছে মামলাজট, বিচারক ও এজলাস সংকট। ভূমি জটিলতায় ব্যাহত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন। কৃষি জমি কমছে অকৃষি খাতে। অনেক দুর্বলের জমি চলে যাচ্ছে ভূয়া কাগজ বলে সবলের দখলে। উপনিবেশিক শাসন আমল থেকে ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জালমুক্ত ও জবাবদীহিতামূলক কাগজের স্বল্পতার কারণে কাঙ্খিত সমাধান হচ্ছেনা কিছুতেই। ডিজিটাল ভূমি কার্ড এর মাধ্যমে ভূমি ও সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস ও সংশ্লিষ্ট আদালতে সমন্বয় করে ভূমি সমস্যা ও মামলাজট কমানো সম্ভব। সেলিম মিয়া গত ১৭/০৭/২০২২ ইং তারিখে উপজেলা প্রেস ক্লাব সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধায় সংবাদ সম্মেলনে বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন ২০০৯ সালে গবেষণা শুরু করি। সেলিম মিয়ার গবেষণা মতে জমির সমন্বয়হীন বিভিন্ন প্রকার কাগজ যা জটিল ও দুর্বোধ্য। ফলে কোন কাগজের কি গুরুত্ব, কোন কাগজ বলে জমির নিষ্কন্টক মালিক হওয়া যায় তা অনেকেই জানিনা। অজ্ঞতা বশতঃ যার নামে দলিল আছে সেই বলে জমি আমার, যার নামে রেকর্ড আছে সেও বলে জমি আমার, যার নামে ডিক্রী আছে সেও বলে জমি আমার, আসলে জমি কার? যার যে কাগজ বলে জমির দাবী করে আদিকাল থেকে হচ্ছে দাঙ্গাহাঙ্গামা, খুনাখুনি, মামলামোকদ্দমা। তিনি বলেন ব্রিটিশ আমলের ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮৫ সালের দখলস্বত্ত্ব আইন, ১৮৭৭ সালের দখল পুনউদ্ধার আইন ও নদী সিকস্তি-পয়স্তি প্রথা সহ পুরনো অনেক আইন ও অপ্রচলিত ভাষা চলমান। যা বর্তমানে অনেকটাই অকার্যকর এবং ভূমি সমস্যার উৎস হয়ে দাড়িয়েছে। ১৮৯০ সাল হতে এ পর্যন্ত দেশে চার ধরনের খতিয়ান হয়েছে (সি.এস, এস.এ, আর.এস, বি.আর.এস)। কিন্তু কোনোটিই সঠিক সময়ে ও নির্ভুলভাবে হয়নি। ফলে রেকর্ডজনিত কারণে ভূমি বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা হচ্ছে। জালিয়াতি ও দূর্নীতি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি সেবা দিচ্ছে। কিন্তু অনেকেই কাগজ ও অনলাইন না বুঝার কারণে অসাধুরা সুযোগ নিচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সহজের পরিবর্তে জটিল হচ্ছে। সেলিম মিয়া ডিজিটাল ভূমি কার্ডের সুফল তুলে ধরে বলেন ডিজিটাল ভূমি কার্ড এর প্রচলন হলে দেশে ভূমি নিয়ে সমস্যা ও অপরাধ কমবে। নারীদের হাতে সহ প্রতিটি ভূমি মালিক ও ওয়ারিশদের হাতে থাকবে সহজবোধ্য ডিজিটাল ভূমি কার্ড। প্রতিষ্ঠা হবে নারীদের ভূমি অধিকার। কার্ডের মাধ্যমে জানা যাবে পিতা-স্বামীর সম্পত্তি ও সম্পদের সঠিক তথ্য, ফারায়েজ, জমির পরিমাপ ও কোন কাগজের কি গুরুত্ব। কার্ডে উঠে আসবে ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ। জমির কোন কাগজ ও সম্পদ একজনের কাছে গোপন থাকবে না। ডিজিটাল কার্ড ও কম্পিউটারে থাকবে জমি ও সম্পদের হিসাব। ডিজিটাল কার্ড দ্বারা হবে জমি বেচা কেনা, রেকর্ড ও নামজারী। কার্ড ও কম্পিউটারে হবে যোগ-বিয়োগ। ভূমি ক্রেতা-বিক্রেতা কাগজের জটিলতায় পড়বেনা। ভূমিদস্যু ও অবৈধ দখলদাররা নিজেদের কার্ড বহির্ভূত কোন জমি দখলে নিতে বা রাখতে পারবেনা। দখল যার জমি তার না হয়ে, হবে কাগজ যার জমি তার। রক্ষা পাবে কৃষি জমি, বন ও পার্বত্য ভূমি। নিরাপদ ও উৎপাদনমুখী হবে দুর্বলের জমি, বিমোচন হবে দারিদ্রতা। ভূয়া দাতা-ক্রেতা, ওয়ারিশ হতে পারবেনা কেউ। এক জমি একাধিকবার, মালিকানার অধিক, মামলাভুক্ত, লিজ ও বন্দোবস্তকৃত জমি হস্তান্তর ও মর্টগেজের সুযোগ থাকবেনা। অধিক জমি দলিলে তুলে নিতে পারবেনা। একজনের জমি আর একজনের নামে রেকর্ড ও নামজারী হবেনা। সঠিকভাবে আদায় হবে জমির খাজনা, আয়কর ও ভ্যাট। রোধ হবে রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ আত্মসাৎ। বেরিয়ে আসবে দেশের মালিকানা ও খাস সহ সকল প্রকার জমির সঠিক হিসাব। কেহ জীবিত কে মৃত, আর মৃতকে জীবিত দেখাইয়া, ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরী করে বা ছিঁড়া, ফাঁটা গায়েব করে প্রতারণা বা জালিয়াতি করিতে পারবেনা। ভূয়া তথ্যের ভিত্তিতে হবে না আর্থিক লেনদেন ও আদালতের রায়। ভুল ও ভূয়া মুক্ত হবে এনআইডি কার্ড ও জন্মসনদ। সুরক্ষিত হবে বৃদ্ধ পিতা-মাতা, রোধ হবে ভূয়া প্রতিবেদন, দীর্ঘসূত্রতা, স্ট্যাম্প জালিয়াতি, জঙ্গি ও মাদক। সহজ হবে সীমানা নির্ধারণ, পিলার স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও চেক বিতরণ। সারা দেশে জমির মাপ হবে একই রকম। একই দলিলে একাধিক দাতা, ক্রেতা ও নাবালক পদ্ধতি থাকবে না। কমবে আইন ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য প্রবণতা। সঠিকভাবে প্রয়োগ হবে আইনের শাসন। সেলিম মিয়া বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরও অধিক শক্তিশালী করতে ও দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং শান্তিময় বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল ভূমি কার্ড আবশ্যক। তিনি এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহিত সাক্ষাতের আবেদন জানান।