চলতি বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় পার হয়ে শ্রাবন হাজির। বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকের বৃষ্টিতে কেউ কেউ আগাম আমন ধান রোপন করেছেন। পরে আর তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। তাই বেশির ভাগ জমিতে ধান রোপন সম্ভব হয়নি। এদিকে কৃষকের বীজতলার ধানের চারার বয়স বেড়ে লাগানোর অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এখনও পর্যন্ত মাঠঘাটে কোন পানি নেই। আগাম রোপন করা আমন ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে মাঠের গভীর নলকূপের আওতার জমিগুলো সেচ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হলেও অন্য ক্ষেতগুলো তাড়াতাড়ি বৃষ্টি না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এমন অবস্থা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সকল মাঠেও।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর। এর মধ্যে আষাঢ়ের প্রথম দিনের বৃষ্টিতে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ জমিতে ধান রোপন সম্ভব হয়েছে। বাকি ৯০ ভাগ ক্ষেত পানির অভাবে পড়ে আছে। কৃষকদের মাঝে এ বছর চরম সংশয় দেখা দিয়েছে আমন রোপন নিয়ে। তাই কৃষকের দৃষ্টি এখন বৃষ্টির দিকে।
দুলালমুন্দিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে আমনের অগ্রিমক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। ক্ষেতের মাটিতে বড় বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। মাত্র ১২ কাঠা জমিতে সেচ দিচ্ছে ৫ ঘন্টা ধরে। কিন্তু এখনও ক্ষেতের অর্ধেকটাও ভেজানো সম্ভব হয়নি। মাঠঘাট শুকিয়ে চৌচির বলেই পানি সেচে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, এবছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করবেন। এরমধ্যে আগাম বৃষ্টিতে মাত্র ১২ কাঠা নিচু জমি রোপন করে বিপদে পড়েছেন। বাকি জমি পানি না হলে রোপন করতে পারছেন না।কৃষক জিয়ারুল ইসলাম জানান, এ এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে কোন বৃষ্টি হয় না। অথচ এ সময়ে মাঠে পানি থৈ থৈ করার কথা। কিন্তু সেখানে মাঠে ধুলো উড়ছে। এদিকে আমনের বীজতলার ধানের চারার বয়স নিয়মের চেয়ে বয়স বেড়ে গেছে
কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অফিসসূত্রে জানাগেছে, ২০০৩ সালের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও জরিপ মতে,কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৯ হাজার ৫’শ ৬৩ টি অগভীর নলকুপ রয়েছে। আর গভীর নলকূপ আছে ৩৮৪ টি। ফলে এখনও সব জমি সেচের আওতায় আসেনি।এলাকায় আষাঢ় শ্রাবন মাসে সাধারনত পানির স্তর উপরের দিকে উঠে। কিন্তু এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর আষাঢ় শ্রাবন মাসেও অল্প হলেও নিচেই নেমেছে। তবে বৃষ্টি হলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মোহায়মেন আক্তার জানান, গত বেশ কয়েক দিন ধরে প্রচন্ড তাপদাহ চলছে। ভরা আষাঢ়েও তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। তাই আমন রোপন বেশ খানিকটা বাধাগ্রস্থ হয়েছে। আসলে প্রকৃতিতে কারও হাত নেই। তবে এখনও বৃষ্টি হলে আমন রোপনে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলে এই কৃষিবিদ মনে করেন।