মুজিববর্ষে দেশের সব ভৃমিহীন পরিবারকে নতুন ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার একশ ৪২টি ভৃমিহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের কলাকোপা এলাকায় ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভৃমিহীন ও গৃহহীনদের জমির দলিল ও ঘর হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃর্ক আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে (দ্বিতীয় ধাপে) ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে এই দুই শতাংশ জমিসহ ঘর হস্তান্তর করেন।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশ্রাফ উদ্দিন, পুলিশ সুপার ড. মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শান্তুনু চৌধুরী, রামগতি পৌরসভার মেয়র এম. মেজবাহ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকু, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ, উপজেলা পরিষদের বিভাগীয় কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সাংবাদিক, উপকার ভোগী পরিবারের সদস্যরা।
১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে যান। এ সময় ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমুল ২শ ১০ পরিবারকে আড়াই শতাংশ জমিসহ ঘর দিয়ে গুচ্ছগ্রাম নামক একটি পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু মাটির কাজের উদ্বোধন করার সময় সাথে ছিলেন স্থানীয় একরাম উদ্দীন। একরাম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তার আবেগ এবং অনুভূতি ব্যক্ত করেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে তিনি গভীর ভাবে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় ঘর পেয়ে আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করেন ৪১ নম্বর ঘরের সুফিয়া বেগম ও ২৭ নম্বর ঘরের জাকিয়া খাতুন। তারা বলেন, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অন্যের জায়গায় খুপড়ি ঘর করে দীর্ঘ সময় দুর্বিশহ জীবন যাপন করেছেন। এখন পাকা ঘর পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
আবদুল বাচেত, মুর্শিদা বেগম, আবদুল বারেকসহ ওই আশ্রয়নে ঘর পাওয়া কয়েকজন উপকারভোগী জানান, তাদের বাড়িঘর নদীতে ভেঙ্গে গেলে অন্যের বাড়ির বাগানে, কেউ কেউ কোন বেড়ির পাশে আশ্রয়ণ নেয়। তারা কোন দিন ভাবেননি মাথা গোঁজার মতো নিজেদের একটি ঠিকানা হবে। আজ অসহায় পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা ঘর পেয়ে কষ্ট দূর হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম. শান্তুনু চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিলেন মুজিব বর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৫৭০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে (১ম ধাপে) ৫২টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে (দ্বিতীয় ধাপে) এখন একশ ৪২টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইউএনও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের কলাকোপা এলাকায় আশ্রায়ন প্রকল্পে ৫.১৫ একর অবৈধ দখল উদ্ধারকৃত খাস জমিতে তৃতীয় পর্যায়ের (২য় ধাপ) এই ঘরগুলো নির্মান করা হয়েছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি পাকা ঘরের নির্মাণ বাবদ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’ টাকা বরাদ্দ করা হয় এবং প্রত্যেক পরিবারের নামে দুই শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নামজারি করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই পরিবারগুলোর জন্য পাকা রাস্তা, তিনটি পুকুর, প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ, ১৩টি গভীর নলকুপ এবং বিনোদনের জন্য স্লিপার, দোলনা রয়েছে।