রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে নিখোঁজের ৪ দিন পর গত (২০ জুলাই) রাত নয়টার সময় আকাশ খান(১৩) নামে কিশোর ভ্যানচালকের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে কিশোরের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে (২১ জুলাই) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাশ দাফন সম্পন্ন করে তার পরিবার।
কিশোর ভ্যানচালক আকাশ উপজেলার বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের পাইককান্দি গ্রামের রাশেদুল খানের ছেলে।
শুক্রবার বেলা ১২টার সময় নিহত আকাশের বাবা মোঃ রাশেদুল খান প্রতিবেদককে ফোন করে জানান তার ছেলে আকাশকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেখানেই তার ছেলের মাথা পাওয়া গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের কিছু হাড়ের আলামত পাওয়া গেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল? তাহলে কি আপনার ছেলেকে মাথাবিহীন অবস্থায় দাফন করেছেন। উত্তরে তিনি বলেন মর্গে থেকে নিয়ে আসার পরে যেভাবে ছিল ওই ভাবেই দাফন করা হয়েছে। এলাকাবাসী বলছিল দেখার মত অবস্থা নেই, এজন্য না দেখেই দাফন সম্পন্ন করা হয়।
আকাশের বাবা রাশিদুল খান বলেন, নিখোঁজের দিন আকাশ সকাল দশটায় ভ্যান নিয়ে বের হয়। আমার পার্শ্ববর্তী বাড়ি আমিনুলের কাছে কিছু টাকা পেত আকাশ। ভ্যান নিয়ে বের হওয়ার পরে আমিনুলের সাথে দেখা হয় আকাশের। পরে আকাশ তার কাছে টাকা চায়। আমিনুল টাকা দেওয়ার কথা বলে আকাশকে নিয়ে যায়। তারপরে আর আকাশের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমি বাড়িতে আসার পরে জানতে পারি আকাশ বাড়িতে আসেনি। তখন আমার নাতি ছেলে বলছিল যে আকাশকে আমিনুল টাকা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে আকাশের খোঁজ না পেয়ে আমি আমিনুলের কাছে জানতে চাই আকাশ কোথায়। আমিনুল বলে আকাশকে তো টাকা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি এখন কোথায় আমি জানিনা। পরবর্তীতে আমিরুলকে গ্রেফতারের পরে আমি জানতে পারি যে আমিনুল আমার ছেলে আকাশকে হত্যা করে ভ্যান গাড়িটি চুরি করে তার শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসছিল।
পাংশা সার্কেলের সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার সুমন কুমার সাহা জানান, বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের বাসিন্দা আকাশ গত ১৬ জুলাই সকাল হতে নিখোঁজ হলে বালিয়াকান্দি থানায় নিখোজ হয়েছে মর্মে জিডি করে তার পরিবার। ২০ জুলাই ঐ ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামের চেচুয়াবিল সোলাইমানের পুকুরপাড় হতে আকাশের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া গেছে বলে সংবাদ দেন এলাকাবাসী। সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে পাংশা সার্কেল অফিসারসহ বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং তদন্ত শুরু করে। এ সংক্রান্তে বালিয়াকান্দি থানায় ২০ জুলাই রাতেই একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়। যার মামলা নং ১৭। ২১ জুলাই বিকালের মধ্যেই আসামিকে গ্রেফতার ও চোরাই ভ্যানগাড়িটি উদ্ধার করা হয়। আসামি প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে হত্যাকা-ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ভ্যান গাড়িটি আসামির শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের সময় দেখা যায় আকাশের শরীরের কিছু অংশ শেয়াল কুকুর খেয়ে ফেলেছিল। আজ মাথা ও দেহের অনান্য আংশ পাওয়া গেছে।
তিনি আরো বলেন, ভিকটিমের বয়স মাত্র ১৩ বছর। ভিকটিম ও আসামির বাড়ি পাশাপাশি। মূলত আসামি আমিনুল ভ্যান গাড়িটি চুরি করার উদ্দেশ্যেই এই হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে। মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে আমরা মামলার রহস্য উদঘাটন করে আসামিকে গ্রেফতারসহ চোরাই ভ্যান গাড়িটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই। ২২ জুলাই আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।